যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ বছর পর আবারও ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ ক্যারোলিনায় ব্র্যাড সিগমন নামের এক ব্যক্তিকে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা রয়েছে। ২০০১ সালে সাবেক প্রেমিকার বাবা-মাকে হত্যার দায়ে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই পদ্ধতির ইতিহাস এবং এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ফায়ারিং স্কোয়াড, যা বন্দুকধারীদের একটি দল দ্বারা অভিযুক্ত ব্যক্তির ওপর গুলি বর্ষণের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতি, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বেশ পুরোনো। ঔপনিবেশিক আমলে বিদ্রোহ দমন করতে, গৃহযুদ্ধের সময় সৈন্যদের মধ্যে বিদ্রোহের প্রবণতা কমাতে, এমনকি পুরাতন পশ্চিমা বিশ্বে দ্রুত বিচারের অংশ হিসেবেও এর ব্যবহার ছিল। বর্তমানে, কিছু মানুষ এটিকে প্রাণঘাতী ইনজেকশনের চেয়ে মানবিক বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করে।
যুক্তরাষ্ট্রে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রথম নজির পাওয়া যায় ১৬০৮ সালে, যখন ভার্জিনিয়ার জেমসটাউনে ক্যাপ্টেন জর্জ কেন্ডালকে বিদ্রোহের অভিযোগে গুলি করে মারা হয়। এরপর, দীর্ঘ সময় ধরে এই পদ্ধতি বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে, আধুনিক সময়ে এর ব্যবহার কমে আসে। ১৯৭৭ সালে মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহালের পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন আসামীর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো গ্যারি গিলমোরের মৃত্যুদণ্ড, যিনি তার আপিল প্রত্যাহার করে স্বেচ্ছায় এই পদ্ধতিতে মরতে চেয়েছিলেন।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি রাজ্যে – আইডিহো, মিসিসিপি, ওকলাহোমা, দক্ষিণ ক্যারোলিনা এবং ইউটাহ – নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমোদন রয়েছে।
ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, আমেরিকান বিপ্লবের সময় সৈন্যদের মধ্যে বিদ্রোহ কমাতে ফায়ারিং স্কোয়াড ব্যবহার করা হতো। গৃহযুদ্ধের সময়ও উভয় পক্ষ সৈন্যদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে এই পদ্ধতির আশ্রয় নিত। তবে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রাণঘাতী ইনজেকশন জনপ্রিয়তা লাভ করে, যা অপেক্ষাকৃত “মানবিক” পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হতো।
কিন্তু, সম্প্রতি প্রাণঘাতী ইনজেকশন নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ফায়ারিং স্কোয়াড নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ঔষধের অভাব এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় অনেক রাজ্য এই পুরোনো পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে। বর্তমানে, ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন আসামী ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আবেদন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই মৃত্যুদণ্ড পদ্ধতির বিতর্ক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। মৃত্যুদণ্ড এবং এর পদ্ধতিগুলো নিয়ে এখানেও বিভিন্ন জনের ভিন্ন মত রয়েছে। এই ধরনের খবর আমাদের বিচার ব্যবস্থা এবং মানবাধিকারের ধারণাগুলোকে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস