গাজা: খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, ইসরায়েলের অবরোধে বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনিরা
জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (World Food Programme – WFP) জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় তাদের খাদ্য সরবরাহ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। বর্তমানে তাদের হাতে মজুদ খাদ্য দিয়ে সেখানকার সরকারি রান্নাঘর ও বেকারিগুলো দুই সপ্তাহেরও কম সময় চালানো সম্ভব। ইসরায়েল খাদ্য, জ্বালানি, ঔষধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে এই সংকট তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো হামাসকে অস্ত্র বিরতির নতুন শর্ত মেনে নিতে বাধ্য করা। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা যুদ্ধের পর গাজার বাসিন্দারা খাদ্য ও অন্যান্য সাহায্যের জন্য সম্পূর্ণরূপে ত্রাণ সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাদের অধিকাংশই বাস্তুচ্যুত এবং আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে ‘굶 starve policy (ক্ষুধা চাপিয়ে দেওয়ার নীতি)’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
অন্যদিকে, গাজার ফিলিস্তিনিরা তাদের অঞ্চল পুনর্গঠনের জন্য আরব দেশগুলোর একটি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে। কায়রোতে অনুষ্ঠিত আরব শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত এই পরিকল্পনায় গাজার প্রায় ২০ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিবর্তে তাদের নিজ বাসভূমে পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছে। খান ইউনিসের বাসিন্দা আতেফ আবু জাহের বলেন, “আমরা এই সিদ্ধান্তগুলোতে সন্তুষ্ট এবং আমাদের ভূমির প্রতি অবিচল রয়েছি।”
তবে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে কিনা, তা নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ রয়েছে। ইয়াসির আবেদ নামের একজন জানান, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আরব দেশগুলোর আন্তরিকতা। তাদের নেওয়া হাজারো সিদ্ধান্তের মতো এই পরিকল্পনাতেও তারা এগিয়ে আসবে, সেই আশা করি।”
গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র হওয়ায় বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে। জরুরি অবস্থার কারণে মানুষজন খাদ্য মজুদ করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, তাদের জ্বালানি সরবরাহও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
সম্প্রতি, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী নতুন চিফ অফ স্টাফ হিসেবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়্যাল জামিরের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই অনুষ্ঠানে হামাস এবং ইরানের মদদপুষ্ট অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘পূর্ণ বিজয়’ অর্জনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, গত ৭ই অক্টোবরের হামাসের হামলার পর লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি পদত্যাগ করেন।
এদিকে, মানবাধিকার সংস্থা ‘ইর আমিম’-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমে রেকর্ড সংখ্যক, অর্থাৎ ১৮১টি ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ধ্বংস করেছে। রমজান মাসেও বাড়ি ভাঙার ওপর ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞা ছিল না বলে জানা গেছে। ফিলিস্তিনিরা এই অঞ্চলে তাদের বসতি সম্প্রসারণ করতে বা নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করতে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস