ফর্মুলা ওয়ানের জগৎ ছাড়িয়ে লুইস হ্যামিলটনের খ্যাতি, ফেরারি’তে যোগ দেওয়ার পর বাড়ছে আলোচনা
ফর্মুলা ওয়ান (F1)-এর দৌঁড়ের জগৎ শুধু গতির খেলা নয়, বরং এটি এখন ফ্যাশন, সংস্কৃতি এবং সমাজের প্রতিচ্ছবিও বটে। এই অঙ্গনে লুইস হ্যামিলটনের মতো একজন তারকার ফেরারি’র মতো কিংবদন্তি দলে যোগ দেওয়াটা তাই কেবল একটি দলের সঙ্গে অন্যটির চুক্তি নয়, বরং এটি একটি বড় ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও বটে। খবরটি এখন বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে খেলা এবং ফ্যাশন জগতে আলোড়ন তুলেছে।
ব্রিটিশ নাগরিক লুইস হ্যামিলটন, যিনি F1-এর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং জনপ্রিয় চালকদের মধ্যে অন্যতম, সম্প্রতি মার্সিডিজ থেকে ইতালির বিখ্যাত দল ফেরারি’তে নাম লিখিয়েছেন। এই চুক্তির ফলে হ্যামিলটন শুধু তাঁর ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেননি, বরং F1-এর বাইরেও তাঁর প্রভাব আরও বাড়িয়ে তুলেছেন। হ্যামিলটন একইসাথে একজন ফ্যাশন আইকন, সমাজকর্মী এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবেও পরিচিত। আগামী বছর তিনি মেট গালা’র চেয়ারপার্সন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন।
হ্যামিলটনের ফেরারি’তে যোগ দেওয়ার খবরটি আসার পর থেকেই যেন এক উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। এই চুক্তির ফলে ফেরারি’র ব্র্যান্ড ভ্যালু অনেক বেড়েছে, যা বাণিজ্যিক দিক থেকেও দলটির জন্য বিশাল সুযোগ নিয়ে এসেছে। খেলা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হ্যামিলটনের এই পদক্ষেপ ফেরারি’র ইতিহাসে নতুন মাইলফলক তৈরি করবে।
শুধু ব্যবসায়িক সাফল্যই নয়, হ্যামিলটনের এই সিদ্ধান্ত ইতালিতেও ভিন্নতা নিয়ে আসার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ফ্যাশন জগতে তাঁর প্রভাবের কারণে অনেকেই মনে করছেন, ইতালির ফ্যাশন শিল্পে পরিবর্তন আসবে। মিলান আফ্রো ফ্যাশন উইকের প্রতিষ্ঠাতা মিশেল ফ্রাঙ্কিন এনগোমোর মতে, হ্যামিলটনের এই পদক্ষেপ ইতালিতে বৈচিত্র্য আনতে সহায়তা করবে।
হ্যামিলটনের ফ্যাশন সচেতনতা বরাবরই প্রশংসিত হয়েছে। ফেরারি’র হয়ে প্রথম ছবিগুলোতেও তাঁর রুচির ছাপ ছিল সুস্পষ্ট। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে তিনি যেন ফেরারি’র প্রতিষ্ঠাতা এনজো ফেরারির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যা ভক্তদের মনে অন্যরকম অনুভূতি জাগিয়েছে।
হ্যামিলটনের খ্যাতি F1-এর গণ্ডি পেরিয়ে বহু আগেই বিস্তৃত হয়েছে। অন্যান্য রেসাররা যখন দলের পোশাক পরে আসেন, হ্যামিলটন আসেন আকর্ষণীয় ফ্যাশন সচেতন পোশাকে। ফ্যাশন জগতের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি খেলা ও ফ্যাশনের বাইরেও দর্শকদের কাছে তাঁকে পরিচিত করে তোলে।
তবে, হ্যামিলটনের ওপর এখন বড় চ্যালেঞ্জ হল মাঠের পারফরম্যান্স। ফেরারি’র হয়ে ভালো ফল করতে না পারলে, দলের সমর্থকেরা হতাশ হতে পারেন। যদিও সম্প্রতি বাহরাইনে অনুষ্ঠিত প্রি-সিজন টেস্টে হ্যামিলটন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে ভালোভাবেই পাল্লা দিয়েছেন, তবে তিনি নিজেও মনে করেন, তাঁদের আরও অনেক কাজ করতে হবে।
হ্যামিলটনের খেলা এবং তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। বর্ণবাদ, মানবাধিকার এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তাঁর সোচ্চার কণ্ঠ সারা বিশ্বের মানুষকে প্রভাবিত করে। তিনি F1-কে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে চান, যেখানে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। ফেরারি’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি এই লক্ষ্য পূরণের দিকে আরও একধাপ এগিয়েছেন।
ইতালিতে হ্যামিলটনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তিনি ইতালীয় ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করছেন, যা ইতালির সংস্কৃতিতে তাঁর আগ্রহের প্রমাণ। মিশেল ফ্রাঙ্কিন এনগোমোর মতে, এর মাধ্যমে হ্যামিলটন বোঝাতে চাইছেন, ইতালি সবার জন্য একটি আপন জায়গা হতে পারে।
হ্যামিলটনের এই পদক্ষেপ শুধু একটি খেলার খবর নয়, বরং এটি একটি সংস্কৃতি এবং পরিবর্তনের গল্প। তাঁর এই যাত্রা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস