**গ্রিনল্যান্ড: ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রহ সত্ত্বেও নিজেদের স্বাধীনতা ধরে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ**
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড, যা ডেনমার্কের স্ব-শাসিত একটি অঞ্চল, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর কারণ, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বীপটি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুটে বোরুপ এগেদে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, “গ্রিনল্যান্ড আমাদের”।
ট্রাম্পের এই আগ্রহ প্রকাশের পরেই গ্রিনল্যান্ডের জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদিকে যেমন অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে কিছু সুবিধা দেখছেন, তেমনই অনেকে নিজেদের সংস্কৃতি ও পরিবেশের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এক ফেসবুক পোস্টে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “আমরা আমেরিকান বা ডেন হতে চাই না। আমরা গ্রিনল্যান্ডের মানুষ। আমেরিকা এবং তাদের নেতাকে এটা বুঝতে হবে। আমাদের কেনা যাবে না, অথবা সহজে কব্জা করাও যাবে না। আমাদের ভবিষ্যৎ আমরাই নির্ধারণ করব।
গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুকের রাস্তায় এখন মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, কিন্তু সেখানকার মানুষের মনে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। সেখানকার একজন তরুণী লিসা আর্ডেস্ট্রুপ জানান, “আমরা মনে করি, এটা একটা খারাপ ধারণা। আমরা আমাদের দ্বীপটিকে স্বাধীন রাখতে চাই।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হলে গ্রিনল্যান্ডের পরিবেশ এবং প্রধান রপ্তানি খাত—মাছ ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতি থেকে আসা বিভিন্ন সমস্যা, যেমন—বন্দুক সহিংসতা, রাজনৈতিক বিভেদ ও গৃহহীনতার মতো বিষয়গুলো নিয়েও উদ্বিগ্ন।
উল্লেখ্য, গ্রিনল্যান্ডে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে স্ব-শাসনের পক্ষে রায় দেওয়া হয়, যা দ্বীপটিকে স্বাধীনতা অর্জনের পথে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। ডেনমার্ক এখনো গ্রিনল্যান্ডের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়ক বিষয়গুলো দেখাশোনা করে থাকে। তবে স্থানীয় সরকার অন্যান্য বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ করে। ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ট্রাম্পের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে গ্রিনল্যান্ডের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্ক থেকে আলাদা হয়ে আমেরিকার অংশ হতে চাইবে না।
তবে, সব গ্রিনল্যান্ডবাসী যে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছেন, তা নয়। ইউলাও স্যান্ডক্রিন নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা, যিনি একসময় মার্কিন কোস্ট গার্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এর ফলে গ্রিনল্যান্ডে “ম্যাকডোনাল্ডস” সহ আরও অনেক আধুনিক সুবিধা আসবে।
বর্তমানে, গ্রিনল্যান্ডে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই নির্বাচনে জনগণের রায় দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস