ইউক্রেন সংকট মোকাবিলায় নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে জরুরি বৈঠকে বসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে সহায়তা বন্ধের ইঙ্গিত এবং নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণার প্রেক্ষাপটে জোটটির নেতারা জরুরি ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি এবং নতুন কৌশল নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা করবেন। খবরটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর এর প্রভাব রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে মূল আলোচনা হবে কিভাবে দ্রুত সামরিক ব্যয়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা যায় এবং সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা খাতে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধি-নিষেধ শিথিল করা যায়। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন der Leyen-এর প্রস্তাব অনুযায়ী, ইইউ সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ঋণ দেওয়ার জন্য আর্থিক বাজার থেকে ১৫০ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারে। এছাড়াও, জোটের দীর্ঘমেয়াদী বাজেট থেকে অর্থ সরিয়ে আনা এবং প্রতিটি দেশকে তাদের জিডিপির ১.৫% পর্যন্ত প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছেন। ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তে ইইউ’র মধ্যে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, অতীতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিল। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। জার্মানির সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রায়েডরিখ মার্চ মঙ্গলবার বলেছেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউরোপকে দ্রুত প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়ার সামরিক শক্তি যেকোনো মুহূর্তে অন্য কোনো ইউরোপীয় দেশে হামলা চালাতে সক্ষম। তাই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোকে তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩% এর বেশি সামরিক খাতে ব্যয় করতে হবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় দেশগুলোকে তাদের জিডিপির ৫% সামরিক খাতে ব্যয় করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে, অনেক ইউরোপীয় দেশই ন্যাটো’র বেঁধে দেওয়া ২% ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করতে পারছে না।
বৈঠকে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শিল্পকে ইউরোপীয় শিল্প নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা এবং দেশটির অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। কারণ ইউক্রেনে অস্ত্রের উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।
তবে, ইইউ-এর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ঐক্যের অভাব। হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার মতো দেশগুলো রাশিয়ার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে, যা ইউক্রেনকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন এবং নেদারল্যান্ডসের মতো বড় দেশগুলোতেও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক দৃঢ় নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বর্তমানে, ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। যুদ্ধে ইতোমধ্যে হাজার হাজার সেনা ও ১২ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস