মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে বিতর্ক আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে। সম্প্রতি, ট্রাম্প প্রশাসন ইডাহো রাজ্যের একটি জরুরি গর্ভপাত মামলার শুনানিতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশজুড়ে গর্ভপাতের অধিকারের প্রশ্নে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
জানা গেছে, বাইডেন প্রশাসন ইডাহোতে জরুরি পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের পক্ষে একটি মামলা দায়ের করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল, গর্ভবতী মহিলাদের জীবন বাঁচানোর জন্য জরুরি বিভাগের ডাক্তারদের গর্ভপাত করার অনুমতি দেওয়া উচিত। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সেই মামলাটি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইডাহো রাজ্যে গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন বেশ কঠোর। সেখানকার সরকার মনে করে, তাদের আইন জীবন রক্ষাকারী গর্ভপাতের অনুমতি দেয় এবং বাইডেন প্রশাসন আইনের এই ধারাটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ইডাহোর চিকিৎসকরা এক ধরনের দ্বিধায় পড়েছেন। তারা বলছেন, কোন পরিস্থিতিতে গর্ভপাত করা যাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এর ফলে জটিল পরিস্থিতিতে পড়া গর্ভবতী মহিলাদের চিকিৎসার জন্য অন্য রাজ্যে পাঠাতে হচ্ছে, যা সময়সাপেক্ষ এবং অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, সেন্ট লুক’স হেলথ সিস্টেম জানিয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় তারা ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে জরুরি অবস্থার কারণে ৬ জন রোগীকে অন্য রাজ্যে পাঠিয়েছে, যেখানে ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরুরি গর্ভপাতের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় চিকিৎসকদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। অনেক চিকিৎসক, এমনকি যারা গর্ভপাতের বিরোধী, তারাও মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে তাদের সব সময় উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হয়।
২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়টি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ওই রায়ে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করা হয়। এরপর থেকে অনেক রাজ্যে গর্ভপাত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে বা এর ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে ১২টি রাজ্যে গর্ভপাত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং আরও চারটি রাজ্যে গর্ভাবস্থার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার পর গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে এই বিতর্ক শুধু আইনি বিষয় নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নারীর স্বাস্থ্য এবং জীবনের অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস