যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ চীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চলা একটি বিশাল সাইবার অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে।
এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১২ জন চীনা নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ভাড়াটে হ্যাকার, সরকারি কর্মকর্তা এবং একটি প্রাইভেট হ্যাকিং কোম্পানির কর্মীরা রয়েছে। বুধবার (গতকাল) মার্কিন বিচার বিভাগ এই তথ্য জানায়।
অভিযোগপত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা ভিন্নমতাবলম্বী, সংবাদ সংস্থা, মার্কিন সরকারি দপ্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সাইবার হামলা চালিয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, চীনে ভাড়াটে হ্যাকিংয়ের একটি বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে, যেখানে ব্যক্তিগত কোম্পানি ও ঠিকাদাররা বেইজিংয়ের নির্দেশে কাজ করে। এর মাধ্যমে চীন সরকার তাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে সুরক্ষা দিতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চীন থেকে আসা সাইবার হুমকির মাত্রা বাড়ছে। গত বছর ‘সল্ট টাইফুন’ নামের একটি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চীনা হ্যাকাররা টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোতে প্রবেশ করে অনেক মার্কিন নাগরিকের ব্যক্তিগত বার্তা ও ফোন কল শুনেছিল, যার মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাও ছিলেন।
অভিযোগপত্রে একটি বেসরকারি হ্যাকিং কোম্পানি ‘আই-সুন’-এর আটজন প্রধান এবং কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে কম্পিউটার সিস্টেমে ঢুকে তথ্য চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করা এবং তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও চীনের প্রথম হ্যাকটিভিষ্ট দলের সদস্য উ হাইবোকে হ্যাকিং কার্যক্রমের প্রধান হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আগে ফাঁস হওয়া কিছু নথিতে দেখা যায়, আই-সুন মূলত ভারত, তাইওয়ান ও মঙ্গোলিয়ার মতো বিভিন্ন দেশের সরকারের ওপর নজর রাখত। তবে নতুন অভিযোগ অনুযায়ী, তারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী চীনা ভিন্নমতাবলম্বী, ধর্মীয় সংগঠন এবং চীন সরকারের সমালোচনামূলক সংবাদ প্রকাশ করে এমন গণমাধ্যমগুলোর ওপরও নজরদারি চালাত। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা এবং একটি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরও তাদের নজর ছিল।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হ্যাকাররা কাজ করত। আবার কখনো তারা নিজেরাই তথ্য চুরি করে সরকারের কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করত। প্রতিটি হ্যাক করা ইমেইল অ্যাকাউন্টের জন্য কোম্পানিটি চীন সরকারের কাছ থেকে প্রায় ১০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার নিত।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিউ পেংইউ এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং অপপ্রচার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, সাইবার ঘটনার অভিযোগের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থাপন করা উচিত, অনুমাননির্ভর অভিযোগের বদলে।
আরেকটি অভিযোগে, আরও দুজন চীনা হ্যাকারের নাম এসেছে, যাদের নাম হলো – ইয়িন কেচেং এবং ঝাউ শুয়াই। তারা মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি, থিংক ট্যাংক, প্রতিরক্ষা ঠিকাদার এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের ওপর সাইবার হামলা চালিয়েছে। তাদের লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিল মার্কিন ট্রেজারি বিভাগও। গত বছর ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছিল, তারা চীনা হ্যাকারদের দ্বারা একটি বড় ধরনের সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ট্রেজারি বিভাগ তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের গ্রেপ্তারে সহায়তাকারী ব্যক্তিকে ২ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, আই-সুন চীনের একটি বিশাল হ্যাকিং ব্যবসার অংশ। গত বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই ধরনের বেসরকারি হ্যাকিং কোম্পানিগুলো অন্যান্য দেশ থেকে তথ্য চুরি করে তা চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করে। গত দুই দশকে, চীনের নিরাপত্তা বিভাগের বিদেশি গোয়েন্দা তথ্যের চাহিদা বেড়েছে, যার ফলে এই ধরনের ভাড়াটে হ্যাকারদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে, যারা চীনের বাইরের শত শত সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস