মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুটা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে জয়লাভ করেন। ট্রাম্পের এই জয় শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনাই নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির জন্যেও তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর এর প্রভাব অনস্বীকার্য।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থা বেশ জটিল। প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে তারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকে। কিছু রাজ্য আছে, যেখানে ডেমোক্র্যাটদের প্রভাব বেশি, আবার কিছু রাজ্যে রিপাবলিকানদের জয়জয়কার। তবে কিছু রাজ্য আছে, যাদের সিদ্ধান্ত সব সময়ই অনিশ্চিত থাকে, এবং নির্বাচনের ফলাফলে তাদের প্রভাব অনেক বেশি। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প এইসব গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে জয়লাভ করেন। এমনকি কিছু ডেমোক্রেট অধ্যুষিত রাজ্যেও তিনি ভালো ফল করেছেন।
ট্রাম্পের এই জয় সহজ ছিল না। বিভিন্ন আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল, গণমাধ্যমগুলোও ছিল তার সমালোচক। এমনকি হোয়াইট হাউসে ফেরার পথে তার ওপর হামলারও চেষ্টা করা হয়। এত প্রতিকূলতার পরেও, ২০শে জানুয়ারী শপথ নেওয়ার পর ট্রাম্পের জনসমর্থন ছিল আকাশচুম্বী।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ট্রাম্পের এই সাফল্যে বিস্মিত হয়েছিল। কারণ, ট্রাম্পের কিছু বিতর্কিত মন্তব্য এবং আচরণের কারণে অনেকেই তাকে অপছন্দ করতেন। তবে, নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, প্রায় ৭৭ মিলিয়নের বেশি আমেরিকান তাকে ভোট দিয়েছেন। এর কারণ বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বিষয় সামনে আসে।
নির্বাচনে আমেরিকানদের প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলো ছিল অর্থনীতি, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতি। এই বিষয়গুলোতে বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনকে তারা তুলনামূলকভাবে দুর্বল মনে করেছে। ট্রাম্পের আগের মেয়াদের কিছু সিদ্ধান্ত তাদের কাছে বেশি কার্যকর মনে হয়েছে।
অর্থনীতি ছিল আমেরিকানদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাইডেনের নীতি এবং দুর্বল কূটনীতির কারণে তারা উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সুদের হারে জর্জরিত ছিল। পেট্রোলের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যপণ্য এবং ওষুধের দামও বাড়ে। ডিমের দাম দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। পরিবারের ভরণপোষণে যখন সমস্যা হচ্ছিল, তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা পরিবর্তনের দিকে তাকিয়ে ছিল। ট্রাম্পের আগের মেয়াদে অর্থনীতির যে চিত্র ছিল, তা তাদের কাছে একটি বিকল্প হিসেবে ধরা দেয়।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের কারণ ছিল মেক্সিকো সীমান্ত নিরাপত্তা। বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ট্রাম্পের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত বাতিল করেন, যার ফল হয় ভয়াবহ। সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ বেড়ে যায়, যা আমেরিকার নিরাপত্তা এবং অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করেন, যার ফলে অবৈধ অনুপ্রবেশের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।
গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়েও ট্রাম্প ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন। নির্বাচনের আগে তিনি শান্তি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং ক্ষমতায় আসার পর দ্রুত যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে কাজ করেন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার নেওয়া পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি এখনো বহাল আছে। সীমান্ত আগের চেয়ে অনেক বেশি সুরক্ষিত। এছাড়াও, জ্বালানি ও পরিবেশ নীতিতে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ট্রাম্পের সমালোচকরা তার কঠোর ভাষা এবং কিছু বিতর্কিত আচরণের সমালোচনা করেন। তবে, তার সমর্থকরা মনে করেন, দেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য ট্রাম্পের এই ধরনের পদক্ষেপ অপরিহার্য। তারা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ট্রাম্পের নেতৃত্ব প্রয়োজন। এই পরিবর্তনের হাওয়া নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা