ইউরোপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নির্ভরতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপটে।
অনেক ইউরোপীয় নেতা এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর কথা ভাবছেন।
এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হলো, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে একটি ‘ইউরোপীয় পরমাণু ছাতা’ তৈরি করা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে, রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলেছে।
এই সময়ে, ইউরোপের নিরাপত্তা অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল ছিল।
কিন্তু বর্তমানে, ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়, ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।
বিশেষ করে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সামরিক শক্তি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে, যা এই আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সম্প্রতি তাঁর দেশের পরমাণু অস্ত্র দিয়ে ইউরোপীয় মিত্রদের সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলেছেন।
জার্মানির একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকও ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পরমাণু সুরক্ষার পরিধি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীও এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
সুইডেন ও ডেনমার্কের মতো দেশগুলোও ফ্রান্সের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
বর্তমানে, ফ্রান্সের কাছে প্রায় ২৯০টি এবং যুক্তরাজ্যের কাছে ২২৫টি পরমাণু ওয়ারহেড রয়েছে।
যদিও রাশিয়ার তুলনায় এই সংখ্যা অনেক কম, তারপরও এটিকে প্রতিরোধের একটি উপায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা একটি বিষয়, তবে এর কার্যকারিতা প্রমাণ করাটাও জরুরি।
অন্যদিকে, কিছু ইউরোপীয় নেতা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আস্থা রাখতে চাইছেন।
পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রজেজ দুদা সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পোল্যান্ডে মার্কিন পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তাঁর মতে, রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্তের পাল্টা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
যুক্তরাজ্যের সরকারও তাদের সামরিক খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার বলেছেন, তারা প্রতিরক্ষা খাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে।
তবে, সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু পরমাণু অস্ত্র দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
এর জন্য প্রয়োজন প্রচলিত এবং অপ্রচলিত উভয় ধরনের সামরিক শক্তির সমন্বয়।
বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, ইউরোপকে নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন