গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে (ডিআরসি) বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম২৩-এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলে খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্যে বিদ্রোহীদের এই অভিযান চলছে। সম্প্রতি এম২৩ বিদ্রোহীরা গুরুত্বপূর্ণ শহর গোমা ও বুকাভু দখল করে নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্রোহী নেতাদের ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে কঙ্গোর সরকার।
খবর অনুযায়ী, রুয়ান্ডা সমর্থিত বিদ্রোহীরা গোমা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত একটি গ্রামে প্রবেশ করেছে। গ্রামটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ওয়ালেকালি শহরের দিকে যাওয়ার পথে অবস্থিত। কঙ্গোতে কর্মরত আল জাজিরার সাংবাদিক জানিয়েছেন, ওয়ালেকালি শহরের খনি থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে থাকে, তাই শহরটি সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো, ‘গ্রুপ কাবিদো’ নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী এম২৩ বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এই গোষ্ঠীটি ডিআরসির পূর্বাঞ্চলে কয়েক দশক ধরে সক্রিয় রয়েছে এবং গত তিন বছর ধরে তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছিল। তাদের নেতারা সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, তারা এম২৩-এর সঙ্গে মিলে ‘কিনশাসার সরকারের অব্যবস্থাপনার’ বিরুদ্ধে লড়াই করবে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এম২৩ বিদ্রোহীরা কঙ্গোর সেনাবাহিনীর দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে। এর মধ্যেই আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী এম২৩-এ যোগ দিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, বিদ্রোহীদের হামলার কারণে হাসপাতালসহ বেসামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার ফলে কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ১ থেকে ৩ মার্চের মধ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কয়েকটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। এছাড়াও, গোমার নিরাপত্তা পরিস্থিতিও হুমকির মুখে পড়েছে, সেখানে চুরি, ডাকাতি ও হামলার মতো অপরাধ বাড়ছে। অন্যান্য এলাকার হাসপাতাল ও স্কুলগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওসিএইচএ আরও জানায়, গত ১৮ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মাসিসি জেলায় এম২৩ ও তাদের প্রতিপক্ষের মধ্যে লড়াইয়ে কমপক্ষে চারজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে এবং লুবেরোতে এক লাখেরও বেশি মানুষ নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
কঙ্গো সরকার বিদ্রোহীদের দমনে ব্যর্থ হওয়ায় এম২৩ নেতাদের গ্রেফতারের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে। দেশটির বিচার মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘কর্নেল নাঙ্গা, বারট্রান্ড বিসিমা ও সুলতানি মাকেনগাকে গ্রেফতার করতে সহায়তা করলে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে।’ নাঙ্গা ‘কঙ্গো রিভার অ্যালায়েন্স’ (এএফসি)-এর নেতা, যে রাজনৈতিক-সামরিক জোটের সঙ্গে এম২৩ যুক্ত। তিনি ডিআরসির সাবেক জাতীয় নির্বাচন কমিশনেরও প্রধান ছিলেন। বিসিমা ও মাকেনগা যথাক্রমে এম২৩-এর প্রেসিডেন্ট ও সামরিক প্রধান। জানা গেছে, ২০১৯ সালে কিনশাসায় তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার হয় এবং দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সরকার এই তিন নেতার সহযোগী এবং পলাতক অন্যান্যদের ধরিয়ে দিতেও ৪০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
জানুয়ারি মাস থেকে ডিআরসির পূর্বাঞ্চলে সংঘর্ষে সাত হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক। এম২৩ হলো পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় ২০০টির বেশি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে একটি, যারা ওই অঞ্চলের খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এক দশক নিষ্ক্রিয় থাকার পর ২০২১ সালে গোষ্ঠীটি আবার সক্রিয় হয় এবং রুয়ান্ডার সীমান্তবর্তী নর্থ কিভু প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নেয়। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল ও যুক্তরাষ্ট্র রুয়ান্ডাকে এম২৩-কে সমর্থন করার জন্য অভিযুক্ত করেছে, যদিও রুয়ান্ডা তা অস্বীকার করেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা