সিরিয়ার পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, গৃহযুদ্ধের ক্ষত এখনো শুকানোর আগেই নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।
দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে লাটাকিয়া এবং এর আশেপাশে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বাশার আল-আসাদের অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।
এতে ১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সিরিয়ার ১৩ বছরের পুরোনো গৃহযুদ্ধের বিভীষিকা আবারও সামনে চলে এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার, আসাদ অনুগত সশস্ত্র যোদ্ধারা সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
এরপরই সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে।
বিদ্রোহীদের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং আসাদের জন্মস্থান কার্দা’হার নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহীরা।
এর কয়েকদিন পরেই সরকারি বাহিনী প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সরকারি বাহিনী এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে।
সংঘর্ষের কারণ হিসেবে জানা যায়, আসাদ সরকারের পতনের পর থেকেই আলাউয়েত সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বেড়ে যায়।
আলাউয়েতরা শিয়া মুসলিমদের একটি শাখা এবং একসময় আসাদ সরকারের প্রধান সমর্থনকারী ছিল।
নতুন সরকার এই অঞ্চলের সব সম্প্রদায়ের জন্য রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে।
সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই আলাউয়েত সম্প্রদায়ের মানুষ।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, কয়েকশ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
সিরিয়ার নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুন্নি মুসলিমদের দ্বারা গঠিত।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
সংঘর্ষের ফলে লাটাকিয়া এবং এর আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ ও খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৭৪৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
এছাড়া, সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর ১২৫ জন এবং আসাদপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ১৪৮ জন সদস্য নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, সরকারি বাহিনী এবং আসাদপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী উভয়ই নির্বিচারে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে।
সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস (এসএনএইচআর) জানিয়েছে, সরকারি বাহিনীর হামলায় বৃহস্পতিবার ১০০ জন নিহত হয়েছে এবং প্রতিশোধমূলক হামলায় প্রায় ১২৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
সংকট সমাধানে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারায়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলাকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি এই সহিংসতার তদন্তের জন্য একটি কমিটিও গঠন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে সিরীয় কর্তৃপক্ষকে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার খ্রিস্টান, দ্রুজ, আলাউয়েত এবং কুর্দি সম্প্রদায়ের পাশে আছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস