সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দেশটির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন।
জর্ডানের রাজধানী আম্মানে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়।
তুরস্ক, ইরাক, জর্ডান এবং লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ হাসান আল-শিবানির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
বৈঠকে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিশেষ করে দেশটির অর্থনীতি এবং জনগণের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরা হয়।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে।
যুদ্ধের কারণে দেশটির অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তাদের জরুরি ভিত্তিতে পুনর্বাসনের প্রয়োজন।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ হাসান আল-শিবানি বলেন, “আমরা সিরিয়ার সকল মানুষের অধিকার রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমরা তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করি না।
সিরিয়ার জনগণের উপর আর কোনো ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না।”
বৈঠকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিনান এই ঐতিহাসিক বৈঠকের প্রশংসা করেন এবং সিরিয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
তিনি ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।
ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, আইএস-এর জঙ্গিরা এখনো সক্রিয় রয়েছে এবং তাদের তৎপরতা বাড়ছে।
আলোচনায় সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
প্রতিবেশী দেশগুলো মনে করে, সিরিয়ার অর্থনৈতিক সংকট এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা তাদের নিজেদের স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফৌয়াদ হোসেন বলেন, “সিরিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য দেশটির বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।”
বৈঠকে ইসরায়েলি সেনাদের সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক অভিযান এবং জাতিসংঘের বাফার জোন দখলের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল গোলান মালভূমি দখল করে নেয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এখনো পর্যন্ত সিরিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে রাজি হয়নি।
তাদের বক্তব্য হলো, সিরিয়ায় একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করার পরেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।
সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো মনে করে, নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে দেশটির পুনর্গঠন বাধাগ্রস্ত হবে এবং শান্তি ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে।
তারা চায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরিয়ার পাশে দাঁড়াক এবং দেশটির জনগণের দুঃখকষ্ট লাঘবে সহায়তা করুক।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস