সৌদি আরবে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আসন্ন বৈঠক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা?
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হতে চলেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সৌদি আরবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হবে। কূটনৈতিক সূত্রে খবর, উভয় দেশই এই আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফল চাইছে।
বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এই বৈঠকে যোগ দেবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্টের অফিসের প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো, যুদ্ধ বন্ধের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা। উভয় পক্ষই চাইছে, দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা যায় কিনা, সে বিষয়ে আলোচনা করতে। এছাড়া, বন্দীদের মুক্তি এবং ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা পুনরায় শুরু করার বিষয়গুলোও আলোচনায় আসতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্কে কিছুটা অবনতি হয়েছিল। বিশেষ করে, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিধা এবং রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মতানৈক্য দেখা গিয়েছিল। তবে, সৌদি আরবে আসন্ন বৈঠকের মাধ্যমে সেই সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সৌদি আরব উভয় পক্ষের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখে। তাই, এই বৈঠকের জন্য সৌদি আরবের জেদ্দাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর আগে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকট সমাধানে সৌদি আরব মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বৈঠকে যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি আলোচনার একটি কাঠামো তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, আলোচনার বিষয়গুলো বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে। বিশেষ করে, ইউক্রেন তাদের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের বিষয়ে এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছে। তাই, দ্রুত কোনো সমাধানে আসা কঠিন হতে পারে।
বৈঠকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে খনিজ সম্পদ বিষয়ক চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ, বিশেষ করে বিরল মাটি (rare earth minerals) অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একটি সমঝোতায় আসা জরুরি। কারণ, এতে করে বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা আরও সুসংহত হবে। কারণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ।
অন্যদিকে, ইউক্রেনও চাইছে, দ্রুত এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে। তবে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আগে তাদের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তা চায়।
আসন্ন এই বৈঠক নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এখন দেখার বিষয়, আলোচনার টেবিলে উভয় পক্ষ কতটা ছাড় দিতে রাজি হয় এবং একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো যায় কিনা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা