ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম আনন্দ উৎসব হলো হোলি। এই উৎসবটি মূলত রঙের উৎসব হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর বসন্তের শুরুতে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়, যেখানে সবাই মিলে রঙ খেলার মধ্যে দিয়ে আনন্দ করে। উৎসবটি শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন বসবাস করেন, সেখানেও পালিত হয়।
হোলির উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক বিশেষ কাহিনী। এই উৎসবের মূল ধারণা হলো, খারাপের বিরুদ্ধে ভালোর জয়। হোলি নামটি এসেছে ‘হোলিকা’ নামক এক রাক্ষসীর নাম থেকে। পুরাণে বর্ণিত আছে, রাজা হিরণ্যকাশিপু নিজের পুত্র প্রহ্লাদকে বিষ্ণুর উপাসনা করতে বাধা দেন। কিন্তু প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণু ভক্ত। তখন হিরণ্যকাশিপু তার বোন হোলিকাকে দিয়ে প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন। কারণ, হোলিকার আগুনে পোড়ার ক্ষমতা ছিল। কিন্তু বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদের কিছু হয়নি, বরং হোলিকা আগুনে পুড়ে মারা যায়। সেই থেকে এই উৎসব ‘হোলি’ পালিত হয়ে আসছে, যা অশুভ শক্তির বিনাশ ও ভালোর জয়কে স্মরণ করিয়ে দেয়।
হোলি উৎসবের আগের রাতে ‘হোলিকা দহন’ পালন করা হয়। এই দিনটিতে একটি অগ্নিকুণ্ড তৈরি করে তাতে শুকনো কাঠ ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে তাতে আগুন জ্বালানো হয়, যা অশুভ শক্তির প্রতীক। এরপর উৎসবের মূল আকর্ষণ হলো রং খেলা। একে অপরের গায়ে রং ছিটিয়ে, জল দিয়ে ভিজিয়ে এই উৎসবে মেতে ওঠে সবাই। এই রং খেলার পেছনেও রয়েছে একটি পৌরাণিক গল্প। কথিত আছে, কৃষ্ণকে এক রাক্ষস নীল রঙে অভিশাপ দিয়েছিল। কৃষ্ণ তাঁর প্রেমিকা রাধার সঙ্গে কিভাবে মিশবেন, সেই চিন্তায় ছিলেন। তখন তাঁর মা যশোদা কৃষ্ণকে পরামর্শ দেন, রাধার মুখে রং লাগাতে। সেই থেকে হোলির রং খেলার প্রচলন শুরু হয়।
হোলিতে ব্যবহৃত রংগুলোরও রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। লাল রং ভালোবাসার প্রতীক, নীল রং কৃষ্ণকে এবং সবুজ রং নতুন শুরুর প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। আগে এই রংগুলো ফুল, মশলা এবং গাছের উপাদান থেকে তৈরি করা হতো, যা ত্বকের জন্য উপকারী ছিল। বর্তমানে সিনথেটিক রংয়ের ব্যবহার বাড়েছে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
হোলি উৎসবে নানা ধরনের খাবার তৈরি করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘গুজিয়া’। এটি ময়দা, শুকনো ফল, বাদাম ও এলাচ দিয়ে তৈরি একটি মিষ্টি জাতীয় খাবার। এছাড়াও, কেউ কেউ ‘ভাং’ নামক এক প্রকার পানীয় পান করে, যা গাঁজা ও দুধ দিয়ে তৈরি করা হয়। এই পানীয় সেবনের মাধ্যমেও তারা উৎসবের আনন্দে যোগ দেয়।
ভারতে হোলি একটি বহুল পরিচিত উৎসব হলেও, বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ও এই উৎসবে মেতে ওঠে। উৎসবের দিনটিতে সবাই মিলেমিশে রং খেলে এবং নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। হোলি উৎসবের মাধ্যমে সমাজের সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাই এক হয় এবং ভালোবাসার বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক