ফিলিপাইনের সাবেক রাষ্ট্রপতি রদ্রিগো দুতার্তের বিরুদ্ধে মাদকবিরোধী যুদ্ধের নামে হাজার হাজার মানুষকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু করেছে এবং সম্প্রতি তিনি ম্যানিলার বিমানবন্দরে পৌঁছালে তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। মঙ্গলবার (তারিখ উল্লেখ করতে হবে) এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
দুতার্তে ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর তিনি মাদক ও অপরাধ নির্মূলের ঘোষণা দেন। এই লক্ষ্যে তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যা ‘মাদক বিরোধী যুদ্ধ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আইসিসির তথ্য অনুযায়ী, দুতার্তের শাসনামলে মাদকবিরোধী অভিযানে প্রায় ১২ হাজার থেকে ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন দরিদ্র ও শহরের বাসিন্দা। তাদের হয় পুলিশের গুলিতে, না হয় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের দ্বারা হত্যা করা হয়।
দুতার্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি তার শাসনামলে ‘মৃত্যু স্কোয়াড’ তৈরি করে বিচারবহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যা করেছেন। তিনি একসময় প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘আমি কি ডেথ স্কোয়াড? হ্যাঁ, আমি তাই।’ দুতার্তের এমন মন্তব্যের জেরে তার সহযোগীরা অনেক সময় বিষয়টিকে হালকাভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। তারা বলেছেন, তার কথাগুলো আক্ষরিক অর্থে না নেওয়ার জন্য। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বরাবরই দুতার্তের এই কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
দুতার্তের জন্ম ১৯৪৫ সালে, ভিসায়াস অঞ্চলের মাসিন শহরে। তিনি একসময় ডাভাও শহরের মেয়র ছিলেন এবং সেখানকার মাদক ও অপরাধ দমনের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। মেয়র থাকাকালীন সময়েও তার বিরুদ্ধে ‘ড্যাভাও ডেথ স্কোয়াড’-এর মাধ্যমে এক হাজারের বেশি মানুষ হত্যার অভিযোগ ওঠে। নিহতদের মধ্যে মাদকাসক্ত, মাদক ব্যবসায়ী, রাস্তার শিশু এবং তার নীতির সমালোচক সাংবাদিকরাও ছিলেন।
দুতার্তের বিতর্কিত মন্তব্যের তালিকাও দীর্ঘ। একবার তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার হলোকস্টের উদাহরণ টেনে নিজের ‘মাদক বিরোধী যুদ্ধ’-কে সমর্থন করেন। তিনি বলেছিলেন, হিটলার যেমন ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন, তেমনি তিনি মাদকাসক্তদের হত্যা করতে চান। এছাড়াও, তিনি নারীদের সম্পর্কেও বিভিন্ন সময় আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।
বর্তমানে ৭৯ বছর বয়সী দুতার্ত স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইন কী এবং আমি কী অপরাধ করেছি?’ তার এই প্রশ্ন অনেকের মনেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান