পর্তুগালে রাজনৈতিক অস্থিরতা, মে মাসে আবারও সাধারণ নির্বাচনের সম্ভাবনা
পর্তুগালের রাজনীতিতে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লুইজ মন্টেনিগ্রোর নেতৃত্বাধীন সরকার বর্তমানে আস্থা ভোটের মুখোমুখি। এই ভোটে সরকারের পতনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে আগামী মে মাসে আবারও সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তার পরিবারের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ থেকে তিনি সুবিধা গ্রহণ করেছেন। গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মন্টেনিগ্রোর ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এডি) সামান্য ব্যবধানে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। তবে পরিবারের ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে ওঠা প্রশ্নগুলোর কারণে তিনি আস্থা ভোটের আহ্বান জানান। আগামী মঙ্গলবার এই ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে মধ্য-বামপন্থী সোস্যালিস্ট পার্টি (পিএস) এবং চরম-ডানপন্থী চেগা পার্টি সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পর্তুগালের ২৩০ আসনের পার্লামেন্টে পিএস এবং চেগা পার্টির সম্মিলিতভাবে ১২৮ জন সদস্য রয়েছে, যেখানে এডি-র আসন সংখ্যা মাত্র ৮০। ফলে, মন্টেনিগ্রো আস্থা ভোটে হেরে গেলে দেশটির প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো ডি সোসা পার্লামেন্ট ভেঙে দেবেন এবং ১১ অথবা ১৮ মের মধ্যে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন।
অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে স্পিনুমভিভা নামক একটি ডেটা সুরক্ষা পরামর্শক সংস্থা, যা মন্টেনিগ্রো ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। পরের বছর তিনি এর মালিকানা তার স্ত্রী এবং ছেলেদের কাছে হস্তান্তর করেন। বিরোধীদের দাবি, ক্যাসিনো এবং হোটেল ব্যবসার মতো বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে স্পিনুমভিভার চুক্তি থেকে মন্টেনিগ্রো লাভবান হয়েছেন। সম্প্রতি জানা গেছে, এই সংস্থাটি এমন একটি কোম্পানির কাছ থেকে মাসিক অর্থ গ্রহণ করছে, যে কোম্পানির সরকার প্রদত্ত একটি বড় জুয়া খেলার অনুমতি রয়েছে। যদিও স্পিনুমভিভার বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো তদন্ত চলছে না, তবে সরকারি কৌঁসুলিরা মন্টেনিগ্রোর বিরুদ্ধে আসা একটি “বেনামি অভিযোগ” খতিয়ে দেখছেন, যা এই সংস্থার লেনদেনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
এর আগে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও কোস্তার পদত্যাগের কারণে পর্তুগালে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে সবুজ বিনিয়োগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। যদিও কোস্তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি, তবে তিনি পদত্যাগ করেন কারণ তিনি মনে করেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রীর পদ “আমার সততার ওপর সন্দেহের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়”।
গত মার্চ মাসের নির্বাচনে এডি ৮০টি আসন পেয়েছিল, যেখানে পিএস-এর দখলে ছিল ৭৮টি আসন। সাবেক ফুটবল বিশ্লেষক আন্দ্রে ভেনচুরার নেতৃত্বে চেগা পার্টি উল্লেখযোগ্য সমর্থন লাভ করে এবং তাদের আসন সংখ্যা ১২ থেকে বেড়ে ৫০-এ পৌঁছায়।
বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনেও একই ধরনের ফল হতে পারে। এডি প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট পেতে পারে, যা পিএস-এর চেয়ে সামান্য বেশি। চেগা পার্টি ১৮ শতাংশ ভোট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান