মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিমালার কারণে কেন্টাকি রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী বারবন (Bourbon) প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি গভীর উদ্বেগের মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া শুল্ক নীতির ফলস্বরূপ, এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছোট ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। কানাডা এবং ইউরোপের বাজারে বারবনের ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও বর্তমানে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
বারবন মূলত এক প্রকার আমেরিকান হুইস্কি। কেন্টাকি রাজ্যের এই পানীয় প্রস্তুতকারকদের ব্যবসা বাণিজ্য বর্তমানে শুল্ক এবং পাল্টা শুল্কের জটিল জালে আটকা পড়েছে। এর ফলে, ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনাগুলো হয় স্থগিত হয়ে গেছে, নয়তো ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কেন্টাকির অনেক ডিস্ট্রিলারি (Distillery) মালিক এখন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন।
লুইসভিলের ব্রো ব্রাদার্স ডিস্ট্রিলারির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভিক্টর ইয়ারব্রো জানিয়েছেন, তারা কানাডা এবং ইউরোপের বাজারে তাদের ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে। তিনি বলেন, “আমরা যেন এই বাণিজ্য যুদ্ধের ‘কোলাটেরাল ড্যামেজ’ বা আনুষঙ্গিক ক্ষতির শিকার হচ্ছি।”
কেন্টাকি রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ডি বেসিয়ারও এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর এবং এর ফলে ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়বে।
বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। বড় কোম্পানিগুলো এই ধাক্কা সামলাতে পারলেও, ছোটদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ, তাদের মূলধন এবং বাজারের পরিধি সীমিত।
উদাহরণস্বরূপ, কেন্টাকির একটি ছোট ডিস্ট্রিলারি, ‘দ্য বার্ড ডিস্ট্রিলারি’ কানাডায় তাদের ব্যবসা বাড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু শুল্কের কারণে তাদের একটি বড় ক্রয়াদেশ এখন স্থগিত হয়ে আছে। এই ধরনের পরিস্থিতি তাদের ব্যবসার জন্য খুবই উদ্বেগের কারণ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও (EU) আমেরিকান হুইস্কির উপর শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর ফলে, এই অঞ্চলের বাজারে বারবনের রপ্তানি আরও কমে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কের কারণে একদিকে যেমন বারবনের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, তেমনি বাজারে টিকে থাকার জন্য কোম্পানিগুলোকে নিজেদের মুনাফা কমাতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ী নতুন বাজারের সন্ধান করছেন, আবার কেউ কেউ অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বায়নের এই যুগে বাণিজ্য যুদ্ধ কোনো দেশের জন্যই ভালো ফল বয়ে আনে না। এর ফলে শুধু ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, বরং ভোক্তাদের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্যও এই ধরনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অস্থিরতা উদ্বেগের কারণ হতে পারে, কারণ এটি সরবরাহ শৃঙ্খল এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস