যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দপ্তর গুটিয়ে দেওয়ার ঘোষণার ধারাবাহিকতায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার (গতকাল) দেশটির শিক্ষা বিভাগ জানায়, তারা প্রায় ১,৩০০ জন কর্মীকে ছাঁটাই করতে যাচ্ছে। এই সংখ্যাটি বিভাগের মোট কর্মীর প্রায় অর্ধেক।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা সচিব লিন্ডা ম্যাকমোহন এই ছাঁটাইকে “যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থার গৌরব পুনরুদ্ধারের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “আজকের এই কর্মী ছাঁটাই কর্মদক্ষতা, জবাবদিহিতা এবং শিক্ষার্থীদের, অভিভাবকদের ও শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ বিতরণের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।”
বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কর্মী ছাঁটাইয়ের এই সিদ্ধান্তের পর বিভাগে জনবলের সংখ্যা আগের ৪,১০০ থেকে অর্ধেকের মতো কমে আসবে। গত সাত সপ্তাহে আরও ৫৭২ জন কর্মচারী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বা অবসরে গিয়েছেন। নতুন করে ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের আগামী সপ্তাহের শেষ থেকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হবে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিউ ইয়র্ক, বোস্টন, শিকাগো এবং ক্লিভল্যান্ডসহ বিভিন্ন শহরে শিক্ষা বিভাগের ভাড়াকৃত ভবনগুলোর চুক্তিও বাতিল করা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য ফেডারেল সহায়তা প্রদান, ছাত্র ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং পেল অনুদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিভাগটি “চরমপন্থী, গোঁড়া এবং মার্ক্সবাদীদের” দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ম্যাকমোহন অবশ্য তার নিয়োগ শুনানিতে স্বীকার করেছিলেন যে, বিভাগ বিলুপ্ত করার ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের হাতে রয়েছে, তবে এর সংস্কার প্রয়োজন হতে পারে।
শিক্ষা বিভাগের এই কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন ডেমোক্রেট ও প্রগতিশীল রাজনীতিবিদরা। টেক্সাসের প্রতিনিধি গ্রেগ কাসার এক টুইটে লিখেছেন, “ধনকুবেরদের কর কাটার জন্য আমাদের শিশুদের কাছ থেকে চুরি করা হচ্ছে।” প্রতিনিধি পরিষদের অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন কমিটির সদস্য রোজা ডিলাউরো এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং মাস্ক ও তাদের বিলিওনেয়ার বন্ধুরা আমেরিকান জীবন থেকে এতটাই বিচ্ছিন্ন যে তারা বুঝতে পারছেন না, কীভাবে সরকারি শিক্ষা বন্ধ এবং এই চুক্তিগুলো বাতিল করা হলে আমেরিকান স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। যদি শ্রমজীবী পরিবারের শিশুরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ না পায়, তাহলে তারা কীভাবে ভবিষ্যৎ গড়বে?”
অন্যদিকে, শিক্ষা বিভাগ সম্প্রতি ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভের জেরে হওয়া অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই বিক্ষোভকে “ইহুদি শিক্ষার্থীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ হয়রানি ও বৈষম্য” হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আরেকটি খবরে জানা যায়, বোস্টনের একজন ফেডারেল বিচারক শিক্ষক প্রশিক্ষণে কয়েকশ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ কমানোর ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা আটকে দিয়েছেন। বিচারক মনে করেন, এর ফলে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা বর্তমানে দেশজুড়ে শিক্ষক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের আগামী ২১শে মার্চ থেকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান