মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের উপর নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ নয়’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।
ফেব্রুয়ারি মাসে আলবানিজের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপের পর অস্ট্রেলিয়াকে শুল্ক থেকে ছাড় দেওয়ার একটি সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই ছাড় মেলেনি। বুধবার (গতকাল) থেকে এই নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। এর ফলে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ জোর দিয়ে বলেন, তাঁর সরকার এই শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে। ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতিকে তিনি ‘অর্থনৈতিক আত্মঘাতী’ বলেও মন্তব্য করেছেন। বুধবার সিডনিতে দেওয়া এক ভাষণে আলবানিজ বলেন, ‘এটি আমাদের দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের চেতনার পরিপন্থী এবং গত ৭০ বছরের বেশি সময়ের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের সুবিধার সঙ্গে মৌলিকভাবে সাংঘর্ষিক।’
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, এই বিষয়ে ট্রাম্প ভেবেছিলেন, কিন্তু কোনো ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকার কথা সবার আগে। অস্ট্রেলিয়া যদি শুল্ক থেকে ছাড় পেতে চায়, তাহলে তাদের ইস্পাত তৈরির কারখানা এখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) সরিয়ে আনার কথা ভাবতে হবে।’
বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দলের নেতা পিটার ডটন আলবানিজের নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। ডটনের মতে, প্রধানমন্ত্রীর ‘অযোগ্যতার’ কারণে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়ছে। তিনি দাবি করেন, আসন্ন নির্বাচনে তাঁর দল জিতলে শুল্কের এই সমস্যা সমাধানে বেশি সুবিধা হবে।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্য এবং শিল্পখাতের প্রতিনিধিরাও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন, এর ফলে স্থানীয় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানিকারক এবং ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত একটি বৃহত্তর বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ। তিনি মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে। এই সপ্তাহে তিনি কানাডার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করারও হুমকি দিয়েছেন।
আগে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, অস্ট্রেলিয়া শুল্ক থেকে অব্যাহতি পেয়েছিল। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল। অর্থাৎ, অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশি পণ্য রপ্তানি করত। তবে, সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত তৈরি করেছে, যা শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদনকে দুর্বল করে দিয়েছে। এর মূল কারণ ছিল, যুক্তরাষ্ট্রে সোনার রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা আসারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান