আর্কটিকে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা দিতে পারে মারাত্মক বিপর্যয়। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলতে শুরু করেছে, যা এরই মধ্যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পরিবর্তনগুলো শুধু আর্কটিক অঞ্চলের জন্য উদ্বেগের বিষয় নয়, বরং এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে সারা বিশ্বে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো নিচু ভূমির দেশগুলোতে।
ফেব্রুয়ারি মাসেই আর্কটিক অঞ্চলের কিছু অংশে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। এই সময়ে সমুদ্রের বরফ ছিল সর্বনিম্ন পর্যায়ে, যা গত তিন মাসের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্কটিকে নতুন এক সংকট তৈরি হয়েছে। সমুদ্রের বরফ কমে যাওয়া এবং সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মতো ঘটনাগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি তীব্র হচ্ছে।
আর্কটিক অঞ্চলের এই পরিবর্তন বৈশ্বিক আবহাওয়ার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এখানকার বরফ গলার কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে, যা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ। জাতীয় তুষার ও বরফ তথ্য কেন্দ্রের উপ-প্রধান বিজ্ঞানী ট্যুইলা মুন বলেন, “আর্কটিক যেন আমাদের পৃথিবীর এয়ার কন্ডিশনার ব্যবস্থা। এর অবনতি বিশ্ব উষ্ণায়নকে আরও বাড়িয়ে তোলে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্কটিকে বরফ কমে যাওয়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, যা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য এক বিরাট হুমকি। প্রতি বছর গ্রিনল্যান্ডে প্রায় ২৮০ বিলিয়ন টন বরফ গলে যাচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভাঙন এবং প্লাবনের ঝুঁকি বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, সুন্দরবন অঞ্চলের কথা বলা যেতে পারে, যেখানে ইতোমধ্যে লোনা পানির অনুপ্রবেশ দেখা যাচ্ছে এবং অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আর্কটিকের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জেট স্ট্রিম দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা বাংলাদেশের আবহাওয়ার ওপরও প্রভাব ফেলছে। জেট স্ট্রিম দুর্বল হয়ে পড়লে আবহাওয়ার পরিবর্তনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হয়, যার ফলে ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও তীব্র গরমের মতো ঘটনাগুলো ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একদিকে যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, তেমনি ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপও বাড়ছে, যা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে।
শুধু জলবায়ু পরিবর্তনই নয়, আর্কটিক অঞ্চলে বিজ্ঞানচর্চাও এখন হুমকির মুখে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কমে যাওয়ায় বিজ্ঞানীরা সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সমস্যা অনুভব করছেন। এছাড়া, বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞান গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানোর কারণেও এই অঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কারণে জলবায়ুর এই পরিবর্তন ঘটেছে এবং এর ফলস্বরূপ আর্কটিক অঞ্চলের অনেক পরিবর্তন হয়তো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এমনকি যদি এখনই কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করা যায়, তাহলেও ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রীষ্মকালে আর্কটিকে বরফশূন্য অবস্থা তৈরি হতে পারে।
আর্কটিকের এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। এখনই যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, যাতে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি নিরাপদ পৃথিবী উপহার দিতে পারি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন