মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বর্জনের এক আন্তর্জাতিক আন্দোলনে উত্তাল বিশ্ব
বিশ্বজুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যের বিরুদ্ধে বর্জনের ডাক ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় এই বর্জনের ঢেউ লেগেছে। কানাডা থেকে শুরু করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এর প্রভাব দৃশ্যমান। খবর প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’।
জার্মানীর খ্যাতনামা বেহালাবাদক ক্রিশ্চিয়ান টেজলাফ এবং তাঁর দল গ্রীষ্মকালে যুক্তরাষ্ট্রে কনসার্ট করার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে তাঁরা সেই সফর বাতিল করেছেন। টেজলাফ বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। এই অনুভূতি নিয়ে আমি সেখানে যেতে পারি না এবং সুন্দর কনসার্টগুলোও করতে পারি না।” শুধু টেজলাফই নন, বর্জন আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে অনেকেই মুখ খুলছেন।
ইউরোপে টেসলার গাড়ি বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। টেসলার প্রধান এলন মাস্ক বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কানাডাতেও বাণিজ্য শুল্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় ভোক্তারা মার্কিন পণ্য বর্জন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে, ‘কিনুন বীভার’, ‘ম্যাপেল স্ক্যান’, ‘এটা কি কানাডিয়ান?’-এর মতো অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হয়েছে, যা ব্যবহারকারীদেরকে পণ্যের বারকোড স্ক্যান করে মার্কিন পণ্য শনাক্ত করতে এবং বর্জন করতে সাহায্য করছে। পরিসংখ্যান বলছে, ফেব্রুয়ারি ২০২৪ এর তুলনায় বর্তমানে কানাডিয়ানদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ২৩ শতাংশ কমেছে।
শুধু কানাডা বা মেক্সিকো নয়, এই বর্জন আন্দোলন এখন অনেক দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে। সুইডেনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ একটি ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়েছেন, যেখানে মার্কিন কোম্পানির পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। ডেনমার্কে গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকির প্রতিবাদে দেশটির বৃহত্তম মুদি দোকান ‘সালিং গ্রুপ’ ইউরোপে তৈরি পণ্যগুলোর গায়ে বিশেষ স্টিকার লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে ক্রেতারা সহজেই ইউরোপীয় পণ্য বেছে নিতে পারেন। নরওয়ের একটি তেল সরবরাহকারী কোম্পানি, যারা আগে মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করত, তারাও সম্প্রতি এই সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
অতীতে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন বা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও বর্জনের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে এত দ্রুত ভোক্তাদের ক্ষোভ এবং বিভিন্ন কোম্পানির এমন সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বিষয়টি নিয়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন ট্রাম্প। তিনি টেসলার ক্রেতাদের বর্জনের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “যারা রিপাবলিকান, রক্ষণশীল এবং সকল মহান আমেরিকান, তাদের জন্য বলছি, এলন মাস্ক আমাদের জাতির জন্য কাজ করছেন এবং তিনি চমৎকার কাজ করছেন!” তবে বামপন্থী উন্মাদরা, প্রায়ই যা করে, টেসলাকে বেআইনিভাবে বয়কট করার চেষ্টা করছে, যা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গাড়ি প্রস্তুতকারক এবং এলনের প্রিয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে এই ধরনের প্রতিক্রিয়া আগে থেকেই অনুমেয় ছিল। জাপানি বহুজাতিক পানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সানটোরি হোল্ডিংসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাকেশি নিনামি জানিয়েছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কায় তারা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য, বিশেষ করে তাদের তৈরি হুইস্কি, অন্যান্য দেশে কম গ্রহণ যোগ্যতা পেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের ‘স্টপ ট্রাম্প কোয়ালিশন’-এর সংগঠক জোই গার্ডনার বলছেন, “বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পেতে চাইছে। ইউরোপে টেসলার বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, কারণ মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক নীতির প্রতীক।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান