স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে, কিন্তু এর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রমের উপর নজরদারির জন্য ব্যবহৃত এআই প্রযুক্তির গোপন দিকগুলো সামনে এসেছে।
এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে দ্রুত জানা যাচ্ছে, তেমনই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্কুল জেলার প্রায় ৩,৫০০ জন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য, যা তাদের অনলাইন কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত ছিল, অসাবধানতাবশত প্রকাশ হয়ে যায়।
এই তথ্যের মধ্যে ছিল শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা, আত্মহত্যার প্রবণতা, বুলিংয়ের শিকার হওয়া, এমনকি তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের খুঁটিনাটি বিষয়ও।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের তথ্য উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া একটি মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে।
মূলত, এই নজরদারি প্রযুক্তিগুলো স্কুল কর্তৃক সরবরাহকৃত ডিভাইসগুলোতে, যেমন ল্যাপটপ বা ট্যাবলেটে, শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে।
এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে, শিক্ষার্থীরা কী লিখছে বা ইন্টারনেটে কী অনুসন্ধান করছে, তার উপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য বিপদ চিহ্নিত করা হয়।
কোনো শিক্ষার্থী যদি আত্মহত্যার কথা লেখে বা সহিংসতার ইঙ্গিত দেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়।
অনেক সময়, এই অ্যালার্টের ভিত্তিতে কাউন্সেলররা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করেন।
তবে, এই প্রযুক্তির কিছু অপ্রত্যাশিত ফলও দেখা যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, এই নজরদারির কারণে অনেক সময় শিক্ষক বা কর্তৃপক্ষের কাছে এমন সব তথ্য চলে যাচ্ছে যা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে।
এছাড়াও, এলজিবিটিQ+ সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তাদের পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
অনেক ক্ষেত্রে, শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি বা সমস্যার কথা বলতে দ্বিধা বোধ করছে, কারণ তারা সবসময় নজরদারির মধ্যে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা প্রশংসনীয়, তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
শুধুমাত্র প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
এই ক্ষেত্রে, প্রশিক্ষিত কাউন্সেলর এবং উপযুক্ত মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা অপরিহার্য।
এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বর্তমানে, উন্নত বিশ্বে এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য হতে পারে।
তবে, এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে শিক্ষার্থীদের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
একইসাথে, এই প্রযুক্তির ভালো এবং খারাপ দিকগুলো বিবেচনা করে একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম অবলম্বনে।