যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনি ছাত্র, বিক্ষোভের জেরে বিতর্কের মুখে, ফেরত পাঠানোর আশঙ্কায়
যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ফিলিস্তিনি ছাত্র মাহমুদ খলিল বর্তমানে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধকে কেন্দ্র করে হওয়া প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যুক্ত থাকার কারণে তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। মাহমুদ খলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইহুদি-বিদ্বেষী এবং হামাস-এর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে, খলিল ও তার সমর্থকেরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মাহমুদ খলিল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী। তিনি একজন বৈধ মার্কিন বাসিন্দা এবং একজন মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করেছেন। গত বসন্তে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়। মাহমুদ খলিল ছিলেন এই আন্দোলনের পরিচিত মুখ। তিনি বিক্ষোভকারীদের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মাহমুদ খলিল সিরিয়ায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা একজন ফিলিস্তিনি। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে তিনি লেবাননে চলে যান এবং সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এসে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এর আগে তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি দূতাবাসে কাজ করেছেন, যেখানে সিরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়তা করতেন। তার এই কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা বিক্ষোভের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে জানা যায়।
মাহমুদ খলিলের আটকের ঘটনাটিকে অনেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আঘাত হিসেবে দেখছেন। মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানানোয় তাকে চুপ করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বিক্ষোভের সময় মাহমুদ খলিলের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে, অনেকে তাকে বিক্ষোভের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন এই ঘটনাকে তাদের নতুন নীতিমালার অংশ হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, এই ধরনের বিক্ষোভগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসগুলোতে ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জানিয়েছেন, মাহমুদ খলিল বিক্ষোভের সংগঠক ছিলেন এবং তিনি ক্লাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করেছেন, সেই সঙ্গে ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি করেছেন।
তবে, মাহমুদ খলিলের সহকর্মীরা তার সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা পোষণ করেন। তারা বলছেন, মাহমুদ খলিল খুবই শান্ত ও ভালো মানুষ এবং বিক্ষোভের সময় তিনি অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি একটি ফেডারেল ডিটেনশন সেন্টারে আটক আছেন। তার স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং তাদের প্রথম সন্তানের আগমনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
মাহমুদের আইনজীবী জানিয়েছেন, তারা দ্রুত তাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। মাহমুদ খলিলের স্ত্রী সবার কাছে আবেদন করেছেন, যেন তারা মাহমুদকে একজন ভালোবাসাময় স্বামী ও বাবা হিসেবে দেখেন এবং তাকে দ্রুত তাদের কাছে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেন।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা