মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে নাসা (NASA) সম্প্রতি উৎক্ষেপণ করেছে অত্যাধুনিক মহাকাশ টেলিস্কোপ ‘স্ফিয়ারএক্স’ (SPHEREx)। এই টেলিস্কোপটির মূল লক্ষ্য হলো, মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য উন্মোচন করা এবং গ্যালাক্সিগুলোর (galaxy/ছায়াপথ) জন্ম ও বিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে স্পেসএক্স (SpaceX) এর একটি ফ্যালকন রকেটে করে টেলিস্কোপটি মহাকাশে পাঠানো হয়েছে।
এই প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ‘স্ফিয়ারএক্স’-এর পূর্ণরূপ হলো ‘স্পেক্ট্রো-ফটোমিটার ফর দ্য হিস্টরি অফ দ্য ইউনিভার্স, ইপক অফ রিওনিাইজেশন অ্যান্ড আইসেস এক্সপ্লোরার’। এটি তৈরি করা হয়েছে বিশেষভাবে, যা মহাকাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। এটির ডিজাইন করা হয়েছে অনেকটা পিয়ানোর মতো, যার ওজন প্রায় ৫০০ কেজি। এই টেলিস্কোপটি পৃথিবীর মেরু অঞ্চল (poles) দিয়ে প্রদক্ষিণ করবে এবং দুই বছর ধরে মোট চারটি সম্পূর্ণ আকাশ জরিপ চালাবে। এর মাধ্যমে এটি কয়েক’শ মিলিয়ন গ্যালাক্সি এবং তাদের মধ্যেকার মহাজাগতিক আলো (cosmic glow) পর্যবেক্ষণ করবে।
‘স্ফিয়ারএক্স’-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক জ্যামি বক-এর মতে, এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাবিশ্বের একেবারে আদিম রূপ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। তিনি আরও জানান, এটি এমন এক পদ্ধতিতে কাজ করবে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। নাসা’র এই নতুন টেলিস্কোপ হাবল ও জেমস ওয়েব-এর মতো উন্নত মানের না হলেও, এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি অনেক বেশি এলাকা জুড়ে থাকা গ্যালাক্সির আলো সংগ্রহ করতে পারবে। ‘স্ফিয়ারএক্স’ ইনফ্রারেড আলো (infrared light) ব্যবহার করবে, যা মানুষের চোখে দৃশ্যমান নয়। এই আলোকরশ্মি ১০২টি ভিন্ন রঙে বিভক্ত করতে পারবে এটি, যা মহাকাশের একটি অত্যন্ত বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করতে সহায়ক হবে।
এই টেলিস্কোপের ভেতরের যন্ত্রাংশকে অতি শীতল (-২১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রাখতে এর নকশায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাইরের তাপ ও সূর্যের আলো থেকে এটি রক্ষার জন্য রয়েছে তিনটি অ্যালুমিনিয়াম-মৌচাকের আবরণ।
শুধু ‘স্ফিয়ারএক্স’ নয়, এই উৎক্ষেপণে আরও চারটি স্যাটেলাইট ছিল, যেগুলোর নাম ‘পাঞ্চ’ (PUNCH)। এগুলো সূর্যের বাইরের স্তর বা করোনা (corona) এবং সৌর বাতাস (solar wind) নিয়ে গবেষণা করবে।
প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যার কারণে এই উৎক্ষেপণটি দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান