মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মী ছাঁটাই নিয়ে উদ্বেগ, কর্তৃত্বের অপব্যবহারের আশঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের কর্মীবাহিনীতে ব্যাপক পরিবর্তন আনার একটি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (Department of Government Efficiency) নামক প্রকল্পের অধীনে সরকারি কর্মীদের ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে, যা স্বেচ্ছাচারী এবং সুপরিকল্পিত নয়। বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ‘পার্টনারশিপ ফর পাবলিক সার্ভিস’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (Chief Executive Officer) ম্যাক্স স্টিয়ার।
ম্যাক্স স্টিয়ারের মতে, সরকারের এই কর্মী ছাঁটাই কার্যক্রম অনেকটা “একটি পাবলিক অ্যাসেট-এর অগ্নিসংযোগ”-এর শামিল। তাঁর মতে, সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপ জনগণের সম্পদ ধ্বংস করার শামিল। সরকারি কর্মীদের ছাঁটাইয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। এতে সরকারের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি জনসাধারণের অর্থের অপচয় হবে।
স্টির আরও উল্লেখ করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ পুরাতন ‘স্পয়লস সিস্টেম’-এর (spoils system) কথা মনে করিয়ে দেয়। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে সরকারি চাকরি দেওয়া হতো, যেখানে যোগ্যতার কোনো মূল্যায়ন ছিল না। এর ফলস্বরূপ দুর্নীতি ও অযোগ্যতা বেড়ে গিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জেমস গারফিল্ডের হত্যাকাণ্ডও এই পরিস্থিতির ফল ছিল। এরপর তৈরি হয় একটি মেধা-ভিত্তিক, অরাজনৈতিক সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমানে যা ঘটছে, তা সেই ব্যবস্থার অবক্ষয় ঘটাচ্ছে।
আলোচিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অভিজ্ঞ কর্মচারী ও নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীরাও। কর্মীদের ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ বা কৌশল অনুসরণ করা হচ্ছে না। এমনকি কর্মীদের পারফরম্যান্স বা দক্ষতার বিষয়টিকেও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারে এমন কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে শূন্যতা তৈরি হবে, যা সরকারের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাবে। উদাহরণস্বরূপ, কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও নিয়োগের পেছনে যে অর্থ খরচ হয়েছে, তা সবই জলে যাবে। এছাড়া, যারা অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত হচ্ছেন, তাদের পুনর্বহাল করতে গেলে সরকারের ওপর আর্থিক চাপ আরও বাড়বে।
অন্যদিকে, ইলন মাস্কের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তির সরকারি নীতি-নির্ধারণে জড়িত হওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ম্যাক্স স্টিয়ারের মতে, মাস্কের মতো একজন ব্যক্তির সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোতে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকা উচিত নয়। কারণ, তাঁর ব্যবসায়িক স্বার্থের সঙ্গে জনস্বার্থের সংঘাত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের নীরবতা নিয়েও অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কংগ্রেসের উচিত ছিল সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপের কারণ ও কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন