যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ)-এর নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
সংস্থাটির প্রধান লি জেল্ডিন সম্প্রতি প্রায় ৩১টি বিধি-নিষেধ শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন, যার মূল লক্ষ্য হল শিল্পখাতকে উৎসাহিত করা এবং অর্থনীতির চাকাকে সচল করা।
এই সিদ্ধান্তগুলোর কারণে জল, বায়ু ও জলবায়ু রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রণীত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইপিএ-এর এই পদক্ষেপগুলো মূলত আগের বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিপরীত।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, জীবাশ্ম জ্বালানি (যেমন কয়লা ও গ্যাস) ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের বিধিমালা পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে বাইডেন প্রশাসন এই নিয়মগুলো তৈরি করেছিল।
তবে, জেল্ডিনের মতে, এই ধরনের কঠোর নিয়ম শিল্পখাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তাই উৎপাদন অব্যাহত রাখতে নিয়মগুলো শিথিল করা হবে।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে নির্গত পারদ (mercury) এবং অন্যান্য বিষাক্ত ধাতুর নিঃসরণ সীমিত করার বিষয়েও নতুন করে ভাবা হচ্ছে।
বাইডেন প্রশাসন এই দূষণ কমাতে একটি কঠোর নিয়ম জারি করেছিল।
কিন্তু ইপিএ বলছে, প্রায় দুই ডজন অঙ্গরাজ্য এই নিয়মের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাদের মতে এটি ব্যয়বহুল এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য বড় বোঝা।
এছাড়াও, শিল্পের সুবিধার জন্য এই নিয়ম মানতে দুই বছরের বাড়তি সময় দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
শিল্পকারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পানি ব্যবস্থাপনার নিয়মও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
তেল ও গ্যাস উত্তোলনের সময় সৃষ্ট দূষিত পানি শোধন করে সীমিত ব্যবহারের অনুমতি ছিল।
নতুন নীতিতে এই পানি অন্য কাজে ব্যবহারের সুযোগ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যেমন – ডেটা সেন্টার শীতলকরণ, অগ্নিনির্বাপণ এবং অন্যান্য পরিবেশগত কাজে।
ইপিএ মনে করে, বর্তমান নিয়মগুলো পুরনো এবং আধুনিক প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে বিবেচনা করে না।
রাসায়নিক ও শিল্পকারখানার দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য বাইডেন প্রশাসন কিছু নতুন নিয়ম তৈরি করেছিল।
এর মধ্যে ছিল জরুরি পরিকল্পনা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলো।
কিন্তু ইপিএ এখন এই নিয়মগুলো পুনর্বিবেচনা করতে চাইছে, কারণ তাদের মতে, এই নিয়মগুলো জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সুপারিশকে উপেক্ষা করে তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের তথ্য সংগ্রহের নিয়ম এবং হালকা, মাঝারি ও ভারী যানবাহনের জন্য নির্গমন মানদণ্ড পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যানবাহনের নির্গমন সীমা শিথিল করা হলে তা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইকে দুর্বল করতে পারে।
ইপিএ-এর এই সিদ্ধান্তগুলোর কারণে পরিবেশবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার রয়েছে।
তাই, যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশের পরিবেশের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস