জার্মানির প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়াতে ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর তহবিল গঠনের পরিকল্পনা, সংসদে বিতর্ক
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে জার্মানির পার্লামেন্ট (বুন্দেসট্যাগ) দেশটির ঋণ সংক্রান্ত নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার (আজ) এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। এই বিশাল অংকের অর্থ মূলত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জার্মানিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)-এর জয় হয়েছে এবং তাদের নেতা ফ্রাইডরিশ মারৎস নতুন চ্যান্সেলর (প্রধানমন্ত্রী) হতে পারেন। মারৎস চান, নতুন পার্লামেন্ট গঠিত হওয়ার আগেই এই তহবিল গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে। কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, নতুন পার্লামেন্টে উগ্র-বাম ও উগ্র-ডানপন্থী এমপিদের বিরোধিতার কারণে প্রস্তাবটি আটকে যেতে পারে। এই বিরোধী দলগুলোর একটি ‘ব্লকিং মাইনরিটি’ তৈরি করার সম্ভাবনা রয়েছে, যা মারৎস এড়াতে চাইছেন।
জার্মানির কঠোর আর্থিক নীতি ‘ঋণ-নিয়ন্ত্রণ’ শিথিল করার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় মিত্র দেশগুলো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং বাজারের পরিস্থিতিও বেশ স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সরকারি ব্যয়ের এই বৃদ্ধি জার্মানিকে অর্থনৈতিক মন্দা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে সহায়তা করবে।
তবে, প্রস্তাবটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মার্তস-এর দল সিডিইউ/সিএসইউ এবং তার সম্ভাব্য জোটসঙ্গী সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (এসপিডি)-কে সাংবিধানিক পরিবর্তন আনার জন্য প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে গ্রিন পার্টির সমর্থন প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবারের বিতর্কের আগে, গ্রিন পার্টি জানিয়েছে যে আলোচনা অচলাবস্থায় পৌঁছেছে। দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, প্রস্তাবটিতে জলবায়ু পরিবর্তন নীতিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এছাড়াও মারৎস-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি নতুন এই অর্থ নতুন সরকারের রক্ষণশীল ভোটারদের খুশি করার জন্য ব্যবহার করতে চান। এই বিষয়ে তাকে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং ব্যাপক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, উগ্র-ডানপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড (এএফডি) এবং উগ্র-বাম দল ডি লিংক (ডাই লিংকি) ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সাংবিধানিক আদালতে অভিযোগ জানিয়েছে। আদালত সম্ভবত এই সপ্তাহেই তাদের রায় দিতে পারে।
মারৎস যুক্তি দিয়েছেন, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের কারণে শুধু জার্মানির জন্য নয়, সমগ্র ইউরোপের জন্যই প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর ইউরোপকে আরও স্বনির্ভর হতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা মার্তসের প্রস্তাবিত এই বিশাল অঙ্কের তহবিলকে ‘বাজুকা’র (যুদ্ধকালীন অস্ত্রের মতো) সঙ্গে তুলনা করেছেন। কেউ কেউ এটিকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বাজি’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন। মারৎস অবশ্য একে ‘আমাদের মহাদেশে শান্তি ও স্বাধীনতার প্রতি হুমকির’ পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।
বৃহস্পতিবারের অধিবেশনে গ্রিন পার্টি এবং ব্যবসায়-বান্ধব দল এফডিপি (FDP) বিকল্প প্রতিরক্ষা অর্থায়নের পরিকল্পনা পেশ করবে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি উত্তেজনাপূর্ণ ও প্রাণবন্ত বিতর্ক সভা হবে। সরকারের প্রস্তাবের ওপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা আলোচনা আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। মার্তস-এর দল জানিয়েছে, এর মধ্যে তিনি গ্রিন পার্টির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান