১17 বছর বয়সে মারা যাওয়া এক নারীর দীর্ঘ জীবন লাভের পেছনে বিশেষ কিছু জিন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার ভূমিকা ছিল বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা নামের এই নারী ছিলেন জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক, যিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন স্পেনে। গত বছরের আগস্টে ১১৭ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং এই গবেষণার প্রধান গবেষক ম্যানেল এস্টেলার নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা মারিয়ার ডিএনএ এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণায় দেখা যায়, মারিয়ার দেহে এমন কিছু জিন ছিল, যা তার কোষগুলোকে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৭ বছর পর্যন্ত ‘তরুণ’ রাখতে সাহায্য করেছে। মানুষের অন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক, সেই মাইক্রোবায়োমও ছিল একজন শিশুর মতো।
মারিয়ার জীবনযাত্রা ছিল খুবই স্বাস্থ্যকর। তিনি প্রতিদিন তিনটি করে দই খেতেন এবং একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতেন। ধূমপান ও মদ্যপান থেকে তিনি নিজেকে দূরে রাখতেন। নিয়মিত হাঁটতেন এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতেন। গবেষকদের মতে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এই বিষয়গুলো সহায়ক হয়েছে।
গবেষকরা মনে করেন, মারিয়ার জীবনযাত্রা এবং জিনের গঠন বিশ্লেষণ করে বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধের নতুন ওষুধ তৈরি করা যেতে পারে। তাদের মতে, বার্ধক্য এবং অসুস্থতা সবসময় একসাথে চলে না, মারিয়ার জীবন সেই ধারণাকেই যেন নতুন করে তুলে ধরে।
মারিয়া ১৯০৭ সালের ৪ঠা মার্চ সান ফ্রান্সিসকোতে জন্মগ্রহন করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তার পরিবার স্প্যান থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমায়। পরবর্তীতে তারা টেক্সাস এবং নিউ অরলিন্স-এ বসবাস করেন। ১৯১৫ সালে তারা আবার স্পেনে ফিরে আসেন এবং কাতালোনিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
মারিয়া ছিলেন অত্যন্ত ভাগ্যবান একজন মানুষ, যিনি ১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারী, দুটি বিশ্বযুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ এর মতো কঠিন পরিস্থিতি পার করেছেন। ২০২০ সালে তিনি যখন কোভিডে আক্রান্ত হন, তখন স্পেনে ভাইরাসটি মারাত্মক রূপ নিয়েছিল এবং ভ্যাকসিনও সহজলভ্য ছিল না। তবে সৌভাগ্যবশত তার মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি এবং তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ফরাসি সন্ন্যাসী লুসিল র্যান্ডনের মৃত্যুর পর গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস মারিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। গিনেস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপকালে তিনি দীর্ঘ জীবনের রহস্য হিসেবে শৃঙ্খলা, পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক, প্রকৃতির সান্নিধ্য, মানসিক স্থিতিশীলতা, দুশ্চিন্তা ও অনুশোচনা থেকে দূরে থাকা এবং ইতিবাচক মানসিকতার কথা উল্লেখ করেন।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে ব্রাজিলের ইনাহ কানাবারো লুকাসের নাম জানা যায়, যিনি ১১৬ বছর বয়সী।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান