সিরিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা: শান্তি ও বিভেদের এক চিত্র
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ায় দীর্ঘ এক দশকের গৃহযুদ্ধের পর নতুন করে ক্ষমতার পালাবদলের প্রেক্ষাপটে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন বেশ জটিল। সাবেক স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর, অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন আহমাদ আল-শারা। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার একদিকে যেমন ঐক্যের বার্তা দিচ্ছে, তেমনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলছে।
গত কয়েকদিনে সিরিয়ায় সহিংসতার ঘটনা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বিশেষ করে, সরকারপন্থী নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে আল-আলাউয়েত সম্প্রদায়ের বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় সিরিয়ার নতুন সরকারের ক্ষমতা সুসংহত করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে, এই অস্থিরতার মধ্যেই আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি নেতৃত্বাধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের একটি চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির ফলে, গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়া সিরিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই চুক্তির ফলে দেশটির সীমান্ত, বিমানবন্দর এবং তেলক্ষেত্রগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তির পেছনে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্ক—উভয় দেশই এই চুক্তির ব্যাপারে সমর্থন জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসকে (এসডিএফ) সমর্থন করে এবং তুরস্ক সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বকে সমর্থন করে।
তবে, সিরিয়ার নতুন সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো এখনো অনেক। বাশার আল-আসাদের পতনের পর, ইসরায়েল দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে কিছু ভূখণ্ড নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, যা সীমান্ত রক্ষার অংশ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে। এছাড়া, এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় সিরিয়ার অর্থনীতিকে পুনর্গঠন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোর উন্নয়নে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
অন্যদিকে, আল-আলাউয়েত সম্প্রদায়ের মানুষজন, যারা আগে থেকেই ইসলামপন্থী সরকারের প্রতি সন্দিহান ছিলেন, সহিংসতার কারণে বর্তমানে আরো বেশি ভীত ও হতাশ। যদিও সরকার সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আশ্বাস দিয়েছে, তারপরও সংখ্যালঘুদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা একটি কঠিন কাজ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য সরকারকে সমাজের সকল স্তরের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের মধ্যে ঐক্যের भावना তৈরি করতে হবে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো অপসারণের চেষ্টা করতে হবে। সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার ওপর।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস