যুক্তরাষ্ট্রে বার্ড ফ্লু’র কারণে ডিমের দাম বাড়ছে, টিকাকরণের সম্ভাবনা নিয়ে বিতর্ক
যুক্তরাষ্ট্রে বার্ড ফ্লু’র প্রাদুর্ভাবের কারণে ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ডিমের উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাওয়ার ফলে দাম আকাশ ছুঁয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বার্ড ফ্লু’র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে পোল্ট্রি ফার্মগুলোতে টিকাকরণের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। তবে এই পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু দ্বিধা কাজ করছে, যা উদ্বেগের কারণ।
বার্ড ফ্লু’র কারণে ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ কোটির বেশি মুরগি মেরে ফেলতে হয়েছে, যার প্রধান শিকার হয়েছে ডিম উৎপাদনকারী মুরগিগুলো। এর ফলস্বরূপ, ডিমের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি ডজন ডিমের গড় দাম প্রায় ৬ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৫০ টাকার বেশি। কোনো কোনো অঞ্চলে এই দাম আরও বেশি।
বার্ড ফ্লু’র বিস্তার রোধ করতে ভ্যাকসিন ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। মার্কিন কৃষি বিভাগ (United States Department of Agriculture) বার্ড ফ্লু’র ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল, মাংস উৎপাদনকারী, ডিম এবং টার্কি উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বার্ড ফ্লু’র বিরুদ্ধে লড়াই করা। যদিও মাংস উৎপাদনকারীরা ভ্যাকসিন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা বিরোধিতা করছেন, কারণ তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে মাংস রপ্তানিতে সমস্যা হতে পারে।
ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ হয়তো পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে না, তবে এটি ভাইরাসের বিস্তার কমাতে সহায়তা করতে পারে। তবে ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যেমন – কীভাবে একটি কার্যকর পদ্ধতি তৈরি করা যায় এবং ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেও খামারে বার্ড ফ্লু’র প্রাদুর্ভাব হচ্ছে কিনা, তা কীভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। এছাড়া, ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে অন্য দেশগুলোতে মাংস রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে কিনা, সে বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কারণ হলো, ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে বার্ড ফ্লু’র ভাইরাস হয়তো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়বে এবং এর ফলে ভাইরাসটির নতুন রূপ (mutation) তৈরি হতে পারে, যা মানুষের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর হবে। এছাড়া, সংক্রমিত পাখি যদি খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার মধ্যে প্রবেশ করে, তবে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
অন্যান্য দেশ, যেমন চীন ও মেক্সিকোতে পোল্ট্রিতে ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়। মেক্সিকোতে মুরগিকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, তবে সংক্রমণ দেখা দিলেও খামার বন্ধ করা হয় না। অন্যদিকে, চীনে সংক্রমিত পাখি পাওয়া গেলে খামার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হলেও বার্ড ফ্লু’র প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে খামার বন্ধ করার মতো পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। ডিম এবং টার্কির ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও মাংস উৎপাদনকারী মুরগির ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, তা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে।
ডিমের দাম কমানোর ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে এবং নতুন করে মুরগি উৎপাদন শুরু করতে বেশ কিছু সময় লাগবে। ফলে, ডিমের দাম সহসা কমার সম্ভাবনা কম।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। আমাদের দেশেও বার্ড ফ্লু’র প্রাদুর্ভাব দেখা যায় এবং ডিম একটি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। তাই, পোল্ট্রি শিল্পে বার্ড ফ্লু’র বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং ডিমের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস