অস্ট্রেলিয়ার গবেষণা খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে – এমন শর্তের কারণে দেশটির গবেষকদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন গবেষণায় অর্থায়নের ক্ষেত্রে এখন ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটানোর কথা বলা হচ্ছে, যা দেশটির শিক্ষা ও গবেষণা জগতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, যারা মার্কিন সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পান, তাদের কাছে একটি বিশেষ প্রশ্নপত্র পাঠানো হচ্ছে।
এই প্রশ্নপত্রে জানতে চাওয়া হচ্ছে, গবেষকরা ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলোর সঙ্গে একমত কিনা।
বিশেষ করে, ‘জেন্ডার’ সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী, তা জানাতে বলা হচ্ছে।
প্রশ্নপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, চীন থেকে কোনো প্রকার অর্থ সাহায্য নেওয়া হয় কিনা এবং গবেষণা প্রকল্পে ‘বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তি’ (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) সংক্রান্ত কোনো উপাদান আছে কিনা।
এছাড়া, ‘জেন্ডার মতাদর্শ’-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জোট (Group of Eight) জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির কারণে তাদের কিছু গবেষণা প্রকল্পের অর্থায়ন স্থগিত করা হয়েছে অথবা বাতিল করা হয়েছে।
এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে কৃষি, বৈদেশিক সাহায্য এবং ‘বৈচিত্র্য ও সাম্য’ বিষয়ক গবেষণা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আশঙ্কা, গবেষণা খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেলে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত গবেষণা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কারণ, গবেষণা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের গভীর সহযোগিতা রয়েছে।
বিশেষ করে, ক্যানসার গবেষণায় দেশ দুটি একসঙ্গে কাজ করে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার গবেষণা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ’ (National Institutes of Health – NIH) থেকে ‘Group of Eight’-এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় ১৬ কোটি ১৫ লক্ষ মার্কিন ডলার অনুদান পেয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষামন্ত্রী জেসন ক্লার্ক বলেছেন, তারা মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছেন এবং বোঝার চেষ্টা করছেন, এই পদক্ষেপগুলোর অর্থ কী।
তিনি আরও জানান, উভয় দেশের স্বার্থে গবেষণা সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
এই পরিস্থিতিতে, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল টার্শিয়ারি এডুকেশন ইউনিয়ন (National Tertiary Education Union – NTEU) দেশটির সরকারকে গবেষকদের ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ’ থেকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে।
তারা মনে করে, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো বিদ্বেষপূর্ণ, বর্ণবাদী এবং নারীবিদ্বেষী।
গবেষণা তহবিলের সঙ্গে এ ধরনের মূল্যবোধ যুক্ত করা হলে তা অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাখাতে অর্থায়ন কমানোর এই সিদ্ধান্ত শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, বিশ্বজুড়ে শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এর ফলে, শিক্ষাগত বিনিময়, পিএইচডি প্রোগ্রাম এবং গবেষণার অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান