শিরোনাম: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তা সংকট, সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য সুইজারল্যান্ডে পাড়ি এক দম্পতির
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের বাসিন্দা এরিক ও এরিন ঈগলম্যান দম্পতি তাদের সন্তানদের উন্নত ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তার কথা ভেবে সুইজারল্যান্ডে চলে যান। এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে ছিল তাদের কিছু নিজস্ব কারণ। সম্প্রতি, সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে তাদের এই পরিবর্তনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
প্রায় ২১ বছর আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এরিক ও এরিন ২০০৮ সালে প্রথমবার সুইজারল্যান্ডে বসবাস করতে যান। এরিক জানান, সাইকেল ডিজাইনার হিসেবে কাজের সুবাদে তারা সেখানে গিয়েছিলেন এবং দেশটি তাদের খুবই ভালো লেগেছিল। যদিও পরবর্তীতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন, কিন্তু তাদের মনে সুইজারল্যান্ডে পুনরায় ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন সবসময় ছিল। তাদের তিন সন্তানের বেড়ে ওঠার জন্য সুইজারল্যান্ডকে আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচনা করতেন তারা। তাদের ভাষায়, “আমরা জানতাম, হয় এখনই, নয়তো কখনোই না।”
যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পর তারা যখন পরিবার শুরু করেন, তখন থেকেই সুযোগ খুঁজতে থাকেন, কিভাবে আবার সুইজারল্যান্ডে ফেরা যায়। যদিও তারা তাদের বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সান্নিধ্য ত্যাগ করতে দ্বিধা বোধ করছিলেন, তবুও তাদের মনে হচ্ছিল, সুইজারল্যান্ডে তারা শূন্য থেকে শুরু করবেন না, কারণ সেখানে তাদের পরিচিতজন ছিল। এরিনের মতে, নতুন জায়গায় একেবারে সবকিছু নতুন করে শুরু করা কঠিন হতে পারে, সেখানে গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু সুইজারল্যান্ডে তাদের সেই সুবিধা ছিল।
বর্তমানে তাদের তিন সন্তানের বয়স ৬ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। এরিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলগুলোতে বন্দুক হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তারা সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাদের মনে হয়েছে, সুইজারল্যান্ডে তাদের ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি নিরাপদ থাকবে।
২০২২ সালে তারা তাদের সন্তানদের নিয়ে এক মাসের জন্য সুইজারল্যান্ডে যান, সেখানকার জীবনযাত্রা পরখ করে দেখার জন্য। এরিক বলেন, “আমরা সেখানে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলাম এবং আমি দূর থেকে অফিসের কাজ করতাম। বাচ্চাদের কাছ থেকে ভালো প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পরেই তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন।”
সুইজারল্যান্ডে বসবাসের বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। ঈগলম্যান দম্পতি মনে করেন, সেখানকার শিশুরা অল্প বয়সেই একাধিক ভাষা শেখার সুযোগ পায়। তাদের সন্তানরা এখন জার্মান ভাষায় কথা বলতে পারে এবং তাদের ছোট সন্তান স্থানীয় উপভাষায় কথা বলা শিখেছে। এখানকার শিশুরা অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে। এরিক জানান, তাদের সাত বছর বয়সী মেয়ে একাই স্কুলে যায় এবং দুপুরের খাবার খেতে বাড়ি ফিরে আসে।
তবে, জীবনযাত্রার উচ্চ খরচ তাদের কাছে একটি উদ্বেগের বিষয়। ঈগলম্যান দম্পতির মতে, সুইজারল্যান্ডে প্রায় সবকিছুর দাম যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি। তারা জানান, জার্মানি ও ফ্রান্সের কাছাকাছি হওয়ায় অনেক সময় সীমান্ত পেরিয়ে গিয়ে জিনিসপত্র কেনা তাদের জন্য সাশ্রয়ী হয়। এছাড়াও, তারা মনে করেন, এখানকার খাদ্যপণ্যের গুণগত মান অনেক ভালো।
সুইজারল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও তারা সন্তুষ্ট। এরিন জানান, এখানে খুব অল্প বয়স থেকেই শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। তাদের ১৩ বছর বয়সী মেয়ের জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন চাকরির ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
ঈগলম্যান দম্পতির মতে, সুইজারল্যান্ডে জীবন কাটানো সবার জন্য নাও হতে পারে। তবে তারা মনে করেন, এখানে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা নিয়ে আসায় তাদের জন্য সবকিছু সহজ হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন