ব্রিটিশ কাউন্সিলের অনলাইন শিক্ষক নিয়োগে চরম বিশৃঙ্খলা, কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ
ব্রিটিশ কাউন্সিলের ‘ইংলিশ অনলাইন’ প্ল্যাটফর্মে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মীদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, এই প্রকল্পে কর্মরত কয়েকশ শিক্ষককে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যা কর্মীদের কাছে ‘খাবার-খোঁজা উন্মত্ততা’ (feeding frenzy) হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কর্মীদের অভিযোগ, এই পদ্ধতিতে তাঁদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল মূলত যুক্তরাজ্য সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান, যার মূল লক্ষ্য হলো সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বৃদ্ধি করা। বর্তমানে, এই কাউন্সিলের ‘ইংলিশ অনলাইন’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সারা বিশ্বে প্রায় ৪৫,০০০ শিক্ষার্থীকে ইংরেজি শেখানো হয়। কিন্তু এখানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে মারাত্মক দুর্বলতা।
অভিযোগ উঠেছে, ব্রিটিশ কাউন্সিল সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ না করে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করে। এর ফলে, যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষককে শূন্য ঘণ্টার চুক্তিতে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এর মানে হলো, তাঁদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। প্রতি সপ্তাহে ক্লাসের জন্য উপলব্ধ সময়সীমা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকদের মধ্যে ক্লাস পাওয়ার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কর্মীদের অভিযোগ, ক্লাস পাওয়ার জন্য তাঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব ক্লাস বুক হয়ে যায়। ফলে অনেক সময় তাঁরা কোনো কাজই পান না।
এই পরিস্থিতিতে, শিক্ষকদের জীবনযাত্রায় চরম অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, শুরুতে তিনি নিয়মিত কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন। তখন তিনি উদ্বেগমুক্ত জীবন যাপন করতেন। কিন্তু মাতৃত্বকালীন ছুটির পর যখন তিনি কাজে ফিরে আসেন, তখন তাঁর আর কোনো নিয়মিত কাজ ছিল না। এমনকি, তিনি এক মাস কোনো বেতনও পাননি। তাঁর জীবনযাত্রা এতটাই অনিশ্চিত ছিল যে, তাঁর স্বামীর একটি সাধারণ চাকরির থেকেও তাঁর চাকরি অনেক বেশি অনিরাপদ ছিল।
শিক্ষকদের সংগঠন ‘টেফল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ধরনের ‘শূন্য ঘণ্টার চুক্তি’ অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। তাঁদের মতে, ব্রিটিশ কাউন্সিলের এই ধরনের নীতি শিক্ষকতার মতো একটি সম্মানজনক পেশাকে কার্যত ‘অনিশ্চয়তার’ মধ্যে ফেলেছে। বর্তমানে, এই ইস্যুতে অন্তত একজন সংসদ সদস্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে শিক্ষকদের বিষয়টি উত্থাপন করতে পারেন বলে জানা গেছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, ‘ইংলিশ অনলাইন’ প্ল্যাটফর্ম শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করে। এখানে শিক্ষকরা বাড়িতে বসে কাজ করার সুযোগ পান এবং নিজেদের সুবিধামতো ক্লাস বেছে নিতে পারেন। তাঁদের আরও জানানো হয়, এখানে কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই এবং এটিকে প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়।
তথ্য সূত্র: অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম