টেসলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ভাঙচুর, এলন মাস্কের বিতর্কিত ভূমিকার প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে টেসলা গাড়ির শোরুম ও চার্জিং স্টেশনে ভাঙচুরের ঘটনা বাড়ছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এলন মাস্কের বিতর্কিত রাজনৈতিক মন্তব্য ও কার্যক্রমের জের ধরেই এমনটা ঘটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠতা এবং তাঁর বিভিন্ন নীতির কারণে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে এই ধরনের প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে টেসলার শোরুমগুলোতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, গাড়ির টায়ারে আগুন, গাড়িতে স্বস্তিকা চিহ্ন আঁকা, গাড়িতে ডিম ও কুকুরের বিষ্ঠা নিক্ষেপসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও, মাস্কের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে।
ওরেগনের সালেমে একটি টেসলা শোরুমে ভাঙচুরের ঘটনা সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের দিন সকালে, মুখোশ পরিহিত এক ব্যক্তি একটি ট্রলি ভর্তি পেট্রোল বোমা নিয়ে শোরুমের দিকে যান। এরপর তিনি একে একে বোমাগুলো ছুঁড়তে শুরু করেন। এতে শোরুমের কাঁচ ভেঙে যায়, সামনে থাকা একটি টেসলা গাড়িতে আগুন লাগে এবং হামলাকারী পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় প্রায় পাঁচ লক্ষ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে।
টেসলার বিরুদ্ধে ভাঙচুরের ঘটনাগুলো শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ নেই। ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, এবং তাসমানিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ফ্রান্সে, একটি টেসলা শোরুমে এক ডজনেরও বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নেদারল্যান্ডসে, মাস্ককে নাৎসি বলার মতো শ্লোগান লিখে গ্রাফিতি আঁকা হয়। তাসমানিয়ায়, এক ব্যক্তি ডিলারশিপের জানালায় “আপনি কি সত্যিই স্বস্তিকা-গাড়ি চালাতে চান?” লিখেছিলেন।
এদিকে, এলন মাস্ক এক টুইট বার্তায় বলেছেন, “অন্যের সম্পত্তি নষ্ট করা, অর্থাৎ ভাঙচুর করা, বাক-স্বাধীনতার অংশ নয়।” ট্রাম্পও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “আমি এই ধরনের সহিংসতা বন্ধ করব।”
যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারাও এই হামলার উৎস খুঁজে বের করার জন্য তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন। হাউস স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন, “কংগ্রেস এই হামলার কারণ অনুসন্ধান করবে এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে বিচার বিভাগ ও ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (এফবিআই) সহায়তা করবে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলন মাস্কের বিতর্কিত মন্তব্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি তাঁর সমর্থন, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা, অনেককে ক্ষুব্ধ করেছে। অনেকেই মনে করেন, মাস্কের নীতিগুলো সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং তাঁর এই ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো জরুরি।
টেসলার বিরুদ্ধে ভাঙচুরের ঘটনাগুলো একদিকে যেমন এলন মাস্কের বিতর্কিত ভূমিকার প্রতিক্রিয়া, তেমনিভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে মানুষের মধ্যে গভীর বিভেদ তৈরি করেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান