দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ইয়ুন সুক-ইওলের অভিশংসন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত রায় ঘোষণার প্রাক্কালে দেশটির রাজধানী সিউলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে জনমত। একদিকে যেমন ইয়ুনের অপসারণের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছেন সাধারণ মানুষ, তেমনি তাঁর সমর্থকরাও জানাচ্ছেন তাঁদের প্রতিক্রিয়া। দেশটির সাংবিধানিক আদালত এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হতে চলেছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি ইয়ুন সামরিক আইন জারির চেষ্টা করেছিলেন, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর ফলস্বরূপ, ইয়ুনের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব আনা হয়। এই ঘটনার জেরে দেশটির অর্থনীতিতেও দেখা দেয় অস্থিরতা। যদি আদালত ইয়ুনের অপসারণের পক্ষে রায় দেয়, তাহলে তাঁকে পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে এবং দুই মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
ইয়ুনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগেও একটি ফৌজদারি মামলা চলছে, তবে তিনি সম্প্রতি কারামুক্ত হয়েছেন। সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্তের কারণে সমাজে রক্ষণশীল ও উদারপন্থীদের মধ্যে গভীর বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সামরিক বাহিনীর ওপরও।
প্রতি সপ্তাহে রাজধানী সিউলের রাজপথগুলোতে ইয়ুন-বিরোধী ও ইয়ুন-সমর্থকদের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্প্রতি, একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৫৮ শতাংশ মানুষ ইয়ুনের অভিশংসনের পক্ষে মত দিয়েছেন, যেখানে ৩৭ শতাংশ এর বিরোধিতা করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাংবিধানিক আদালতের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সামরিক আইন জারির পর কেন ইয়ুন শত শত সেনা ও পুলিশ সদস্যকে জাতীয় পরিষদে পাঠিয়েছিলেন। ইয়ুন অবশ্য বলেছেন যে তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছিলেন। তবে, সেখানে উপস্থিত কিছু শীর্ষ সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি তাঁদের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিরোধী রাজনীতিকদের গ্রেপ্তার করতে এবং তাঁর ডিক্রির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখতে। এই মামলার রায় দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা