ভ্যাটিকান সিটির টেলিফোন এক্সচেঞ্জে কর্মরত নানদের (Nuns) কাছে আজকাল ফোন আসে উপচে পড়ছে। পোপ ফ্রান্সিসের স্বাস্থ্য কেমন আছে, এই নিয়েই তাদের প্রধান উদ্বেগের কারণ। সম্প্রতি পোপের অসুস্থতার খবরে উদ্বিগ্ন ভক্তদের নানা প্রশ্ন সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার কাছেই একটি সাধারণ অফিসে বসে কাজ করেন সিস্টার অ্যান্টনি। তিনি জানান, “তাদের মনে হয় যেন তারা তাদের বাবার (পোপ) জন্য উদ্বিগ্ন শিশু। আমরা তাদের প্রার্থনা করতে বলি।
ভ্যাটিকানের এই কেন্দ্রীয় ফোন নম্বরটি সবার জন্য উন্মুক্ত। ডিজিটাল যোগাযোগের যুগেও তারা নিশ্চিত করেন, ফোনের ওপাশে একজন মানুষ আছেন, কোনো স্বয়ংক্রিয় বার্তা বাটন টিপে পরিষেবা নয়। “প্রেস ১ ফর ইংলিশ, প্রেস ২ ফর ল্যাটিন”-এর মতো স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির বদলে এখানে সরাসরি মানুষের কণ্ঠস্বর শোনা যায়। এই বিষয়ে মাদার মিকায়েলা জানান, “ভ্যাটিকান তাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে মানবিক দিকটি বজায় রাখতে চায়।
পবিত্র ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োজিত ‘পায়াস ডিসাইপেলস অফ দ্য ডিভাইন মাস্টার’ নামক একশ বছরের পুরনো সংগঠনের সিস্টাররাই এই টেলিফোন এক্সচেঞ্জের কাজটি করেন। ১৯৭০ সাল থেকে তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তৎকালীন মাদার সুপিরিয়র তাদের বলেছিলেন, “তোমরা এমন কণ্ঠস্বর হবে যা ভালো কাজ করবে, কারণ ফোনের মাধ্যমে তোমরা খ্রিষ্টের বার্তাই পৌঁছে দেবে।
সিস্টাররা প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে, সপ্তাহে সাত দিন এই ফোনের দায়িত্ব পালন করেন। তাদের সামনে থাকা বড় পর্দায় ভেসে ওঠে ফোনকারীর দেশের নাম। রাতের শিফটে ডিউটি করেন ভ্যাটিকানের পুলিশ।
ইতালি, ফিলিপাইন, পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রায় এক ডজন সিস্টার ইতালীয়, ইংরেজি এবং স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেন। সারা বিশ্ব থেকে আসা ফোনকলগুলির মাধ্যমে সাহায্যপ্রার্থীদের সঠিক বিভাগে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সিস্টার অ্যান্টনি জানান, বিশাল আকারের ডিরেক্টরি এবং প্রোটোকল সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকার কারণে তারা সহজেই এই কাজটি করতে পারেন।
যারা আর্থিক সাহায্যের জন্য ফোন করেন, তাদের ভ্যাটিকান আলমোনারের অফিসে পাঠানো হয়। এই অফিস সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধের শিকার, ব্রাজিলের বন্যা এবং ইতালির নেপলসের গৃহহীনদের সাহায্য করেছে।
সিস্টার গ্যাব্রিয়েলা সম্প্রতি এক পুরোহিতের ফোন পান, যিনি অন্যান্য যাজকদের সঙ্গে মিলিতভাবে তীর্থযাত্রার অংশ হিসেবে একটি বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করতে চাইছিলেন। ২০২৫ সালকে ক্যাথলিক চার্চের পবিত্র বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সময়ে প্রায় ৩ কোটি ২০ লক্ষ তীর্থযাত্রীর ভ্যাটিকান পরিদর্শনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই সংক্রান্ত ফোনকল তাদের দৈনিক আসা ৫০ থেকে ৭০টি কলের একটি বড় অংশ।
তবে কিছু ফোন আসে যেখানে সরাসরি সাহায্য করা সম্ভব হয় না। উদ্বিগ্ন, হতাশ বা ক্রুদ্ধ মানুষেরা তাদের সমস্যার কথা জানান। সিস্টার সিমোনা, যিনি ১৫ বছর ধরে এই বিভাগে কাজ করছেন, বলেন, “আমরা কখনো একই ধরনের ফোনকল পাই না।
পোপ ফ্রান্সিস তাঁর পোশাক থেকে শুরু করে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের প্রতি ব্যক্তিগত মনোযোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেকে তুলে ধরেছেন। তাই অনেকে চান সরাসরি পোপের সঙ্গে কথা বলতে। সিস্টার গ্যাব্রিয়েলা জানান, “সাধারণ বিশ্বাসীরা বোঝেন না যে পোপ সবার সঙ্গে কথা বলতে পারেন না।
আবার অনেকে কাউন্সেলিং বা সান্ত্বনার জন্য ফোন করেন। সিস্টাররা সীমিত সময়ের মধ্যে এবং ভ্যাটিকানের মুখপাত্র হিসেবে নিজেদের পরিচয় না দিয়ে তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করেন। সিস্টার অ্যান্টনি বলেন, “আমি যদি কাউকে সান্ত্বনা বা আশা দিতে পারি, তবে আমি মনে করি এটা ভালো। কিছু ফোনকল খুবই মর্মস্পর্শী হয়।
পোপের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন এক মুসলিম নারী সিস্টার অ্যান্টনিকে ফোন করে তাঁর ভালো লাগা ও উদ্বেগের কথা জানান। সিস্টার বলেন, “বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
তবে সব ফোন যে বন্ধুত্বপূর্ণ হয়, তা নয়। “অন্যরা চার্চের ওপর রাগ করে, আমরা তাদের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনি।
সিস্টাররা জানান, বিভিন্ন ধরনের ফোনকলের মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণ তাদের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মাদার মিকায়েলা বলেন, “পোপ ফ্রান্সিস প্রায়ই বলেন, চার্চ একজন মায়ের মতো। এই কণ্ঠস্বর, সংবেদনশীলতা এবং নারীসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি নির্ভরযোগ্যতা তৈরি করে।
ভ্যাটিকানে প্রায় ১১০০ জন নারী কাজ করেন, যাদের মধ্যে ধর্মযাজক এবং সাধারণ নারী উভয়ই রয়েছেন। পোপ ফ্রান্সিস সম্প্রতি কয়েকজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছেন।
সিস্টার অ্যান্টনি বলেন, “পোপের সঙ্গে একই সম্প্রদায়ে থেকে বিশ্ব চার্চের সেবা করা আমার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। নারীদের আরও বেশি দায়িত্ব পাওয়ার সুযোগ হচ্ছে, এটা আমাদের আরও শক্তিশালী করে তোলে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস