সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচের শাসনের বিরুদ্ধে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা ছাত্র আন্দোলন এর চূড়ান্ত রূপ নেয় এই বিক্ষোভে। দুর্নীতি ও অযোগ্যতার অভিযোগে সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই বিক্ষোভে।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, সরকারের স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না। তারা ঘুষ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে চায়। বিক্ষোভের মূল কারণ হলো নভেম্বরের ১ তারিখে নোভিসাদে একটি নতুন সংস্কার করা রেলস্টেশনের উপরে কংক্রিটের ছাউনি ভেঙে ১৫ জন নিহত হয়। এই ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নির্মাণকাজে ত্রুটি এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এর পরেই মূলত প্রতিবাদ আরও জোরালো হয়।
প্রেসিডেন্ট ভুচিচ এই বিক্ষোভকে “বিদেশি মদদপুষ্ট বিপ্লব” হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন। যদিও তিনি তার দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি। বিক্ষোভের আগে, ভুচিচ উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলেন এবং তার বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন।
বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সরকার সমর্থক কিছু লোকও সেখানে জড়ো হয়। তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন কালো পোশাক পরিহিত এবং বেসবল ক্যাপ পরা যুবক। এছাড়া, কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য এবং প্রাক্তন সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিল বলে জানা যায়।
বিক্ষোভের কারণে কিছু এলাকার ট্রেন ও শহরের পরিবহন পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া, দেশটির বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গাড়ির বহর রাজধানী অভিমুখে যাত্রা করে, যেখানে জাতীয় পতাকা ও ব্যানার নিয়ে ছাত্ররা এই আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছিল। কৃষকরাও তাদের সমর্থন জানাতে ট্রাক্টর নিয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union) এবং জাতিসংঘ (United Nations) উভয়ই সার্বিয়ার সরকারকে বিক্ষোভ প্রদর্শনের অধিকারকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোও এই বিক্ষোভের প্রতি কিছুটা দ্বিধা দেখাচ্ছে, কারণ তারা রাশিয়ার প্রভাব থেকে দূরে সরিয়ে ভুচিচের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে ডন জুনিয়রও এক সাক্ষাৎকারে এই বিক্ষোভকে বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত বলে মন্তব্য করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিক্ষোভের মাধ্যমে একটি “বিপ্লব” ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান