ডারউইন নুনেজ: লিভারপুলের জার্সিতে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার শেষ সুযোগ?
ইউরোপিয়ান ফুটবলের উন্মাদনা বাংলাদেশেও তুঙ্গে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (Premier League) -এর অন্যতম জনপ্রিয় দল লিভারপুল (Liverpool)। আর এই দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে সমর্থকদের আগ্রহের শেষ নেই। সম্প্রতি, লিভারপুলের স্ট্রাইকার ডারউইন নুনেজকে (Darwin Núñez) নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। মাঠের খেলায় তার ধারাবাহিকতার অভাব এবং গোল করার সুযোগ হাতছাড়া করার প্রবণতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। তবে আসন্ন কারাবাও কাপ ফাইনাল (Carabao Cup final) -এ নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি।
উরুগেরুয়ের এই স্ট্রাইকারকে প্রায়ই তুলনা করা হয় জনপ্রিয় একটি চরিত্রের সঙ্গে। চরিত্রটি হলো ‘এল চাও দেল ওচো’ (El Chavo del Ocho)। সত্তরের দশকে মেক্সিকোতে তৈরি হওয়া এই হাস্যরসাত্মক টিভি সিরিয়ালটি এক দরিদ্র, অনাথ বালকের গল্প নিয়ে তৈরি। নুনেজের খেলার ধরনেও যেন সেই চরিত্রের কিছুটা ছাপ খুঁজে পাওয়া যায়। মাঠের খেলায় মাঝে মাঝে তার অগোছালো ভাব এবং সহজ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে না পারার কারণে অনেকে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করেন। তবে ‘এল চাও’ চরিত্রের মতো নুনেজের মধ্যেও একটা সরলতা এবং চেষ্টা করার মানসিকতা রয়েছে, যা দর্শকদের মনে তার প্রতি সহানুভূতি তৈরি করে।
২০২২ সালে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি নুনেজ। বিশেষ করে গোল করার ক্ষেত্রে তার দুর্বলতা চোখে পড়েছে। ইয়ুর্গেন ক্লপের (Jürgen Klopp) অধীনে খেলার সময় তার পারফরম্যান্সের কিছু পরিসংখ্যান উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। গোল, প্রত্যাশিত গোল, অ্যাসিস্ট, গুরুত্বপূর্ণ পাস, ড্রিবলিং, শট—সবকিছুতেই যেন আগের চেয়ে পিছিয়ে তিনি। শোনা যাচ্ছে, গ্রীষ্মকালীন দলবদলে (summer transfer) নুনেজকে নিয়ে দল ছাড়ার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
তবে, নুনেজের খেলোয়াড়ি জীবনে খারাপ সময়ও এসেছে। দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা, ১৯ বছর বয়সে গুরুতর ইনজুরির কারণে দেড় বছর মাঠের বাইরে থাকা—এসব প্রতিকূলতা থেকে ফিরে আসার মানসিকতা তাকে আরও শক্তিশালী করেছে। চলতি মৌসুমে ট্যাকল ও ইন্টারসেপশনে তার উন্নতি দেখা গেছে। ব্রেন্টফোর্ড, সাউদাম্পটন ও অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে তার করা গুরুত্বপূর্ণ গোলগুলো দলের জয়ে ভূমিকা রেখেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে (Champions League) পিএসজির (PSG) বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করলেও, প্রথম লেগে হার্ভে এলিয়টের (Harvey Elliott) জয়সূচক গোলে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য।
অনেকের মতে, আর্নে স্লটের (Arne Slot) অধীনে নুনেজকে খেলানোর কৌশল এখনো সেভাবে তৈরি হয়নি। তবে, ফুটবল মাঠে একজন খেলোয়াড়ের আসল পরিচয় গড়ে ওঠে মাঠের পারফরম্যান্সের মাধ্যমে। নুনেজের সামনে এখনো সুযোগ আছে। রবিবার নিউক্যাসলের (Newcastle) বিপক্ষে কারাবাও কাপ ফাইনাল তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হতে পারে। এই ম্যাচে ভালো পারফর্ম করে তিনি যেমন সমালোচকদের জবাব দিতে পারেন, তেমনি লিভারপুলের জার্সিতে নিজের ভবিষ্যৎও আরও উজ্জ্বল করতে পারেন।
ফুটবল কেবল পরিসংখ্যানের খেলা নয়, এটি স্মৃতি তৈরিরও একটি মাধ্যম। ডিভোক অরিগি (Divock Origi) -র মতো খেলোয়াড়রা বড় ম্যাচের পারফরম্যান্সের মাধ্যমে সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। নুনেজেরও সেই সুযোগ রয়েছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian