যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে টেসলার শোরুমগুলোর সামনে সম্প্রতি বিক্ষোভ হয়েছে, যেখানে কয়েক’শ মানুষ যোগ দেন। মূলত টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের সরকারি ব্যয় সংকোচনের কার্যক্রমে জড়িত থাকা এবং টেসলার বিরুদ্ধে হওয়া কিছু ভাঙচুরের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের নীরবতার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ হয়।
বিক্ষোভকারীরা ‘টেসলা টেকডাউন’ নামক একটি আন্দোলনের অংশ। এই আন্দোলন গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি, মাস্কের মালিকানাধীন বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানির বিরুদ্ধে শুরু হয়। হলিউড অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা অ্যালেক্স উইন্টার এবং বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও নতুন মিডিয়া স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক জোয়ান ডোনোভান এই আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, মাস্ক সরকারের ব্যয় সংকোচনের নামে বিভিন্ন সরকারি বিভাগে কর্মী ছাঁটাই করছেন, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবাতেও (আইআরএস) কর্মী কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
টেসলা টেকডাউন আন্দোলনের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, শনিবার দেশজুড়ে ৮০টির বেশি স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় এবং এপ্রিল মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত ৭০টির বেশি বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে। আন্দোলনকারীরা জনসাধারণকে তাদের টেসলা গাড়ি বিক্রি করতে, টেসলার শেয়ার ত্যাগ করতে এবং বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দিতে আহ্বান জানাচ্ছেন।
বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু ছিল টেসলার কার্যক্রম। ডেডহাম, ফিলাডেলফিয়া, বাল্টিমোর ও ওয়াশিংটন ডিসি’র মতো শহরগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ এতে অংশ নেয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে এসেছিলেন, যেখানে মাস্কের নীতির সমালোচনা করা হয়। তারা রাস্তায় গান গেয়ে এবং নাচানাচি করে তাদের প্রতিবাদ জানান।
সারা স্টেফেন্স নামে এক প্রাক্তন সাংবাদিক ও নীতিনির্ধারক এবং মেলিসা নুটসন নামের একজন স্ব-নিযুক্ত ব্যক্তি এই বিক্ষোভকে একটি আনন্দ-মিছিলের রূপ দেন। নুটসন জানান, তিনি মেরিল্যান্ডের একটি বিক্ষোভের মতো একই রকম পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তিনি সিএনএনকে বলেন, “আমাদের মধ্যে আনন্দ থাকা দরকার, কারণ এটি একটি দীর্ঘ যাত্রা এবং এই স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”
এদিকে, টেসলার বিরুদ্ধে হওয়া ভাঙচুরের ঘটনায় ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে টেসলার শোরুম, চার্জিং স্টেশন এবং গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। মার্চের ৩ তারিখে, বোস্টনের বাইরের একটি শপিং মলের সাতটি চার্জিং স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর পাঁচ দিন পর, নিউ ইয়র্ক সিটিতে বিক্ষোভকারীরা একটি শোরুম দখল করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়। কলোরাডোতে, একজন নারীকে গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও একটি শোরুম ভাঙচুরের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি টেসলার গাড়ি ও শোরুমের ওপর হামলার তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি কেউ টেসলার কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা এই ধরনের কাজের জন্য অর্থ যোগান দিচ্ছে, তাদেরও খুঁজে বের করা হবে।”
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মাস্ক সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের দক্ষিণ লনে পাঁচটি টেসলা গাড়ির প্রদর্শনী করেন। ট্রাম্প গাড়িগুলোকে “সুন্দর” হিসেবে বর্ণনা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে এই প্রদর্শনী টেসলার বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করবে।
তবে, সমালোচকদের মতে, মাস্কের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে টেসলার সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টেসলার শেয়ারের দামেও এর প্রভাব পড়তে পারে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে টেসলার শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ছিল, কিন্তু বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
ওয়াশিংটন ডিসির বিক্ষোভের সময় স্টেফেন্স বলেন, “আমাদের শুধু দিনের পর দিন শেয়ারের দামের দিকে তাকালে চলবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে চাপ বজায় রাখতে হবে।” নুটসন আরও জানান, ‘টেসলা টেকডাউন’ আন্দোলন টেসলার চালক বা গাড়ির বিরুদ্ধে নয়। তাদের মূল লক্ষ্য হলো ইলন মাস্ককে চাপে রাখা এবং তার ক্ষতি করা।
অন্যদিকে, অ্যামাজনে গত এক মাসে আটশর বেশি ‘অ্যান্টি-মাস্ক’ বাম্পার স্টিকার বিক্রি হয়েছে, যা মূলত টেসলা গাড়িতে লাগানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্কের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব টেসলার সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর ফলে ভোক্তারা অন্যান্য বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থার দিকে ঝুঁকতে পারে। টেসলার বাজার হিস্যা এরই মধ্যে কমেছে, কারণ বাজারে অন্যান্য অনেক কোম্পানি নতুন নতুন বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে আসছে।
তবে, টেসলা মালিকরা মাস্কের সমালোচনাকে কতটা গুরুত্ব দেন এবং গাড়ি বিক্রি করতে রাজি হন কিনা, তা এখনই বলা কঠিন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন