মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যম ভয়েস অফ আমেরিকার (ভিওএ) কার্যক্রমের উপর চরম আঘাত হেনেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। সম্প্রতি, ভিওএ-এর মূল সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়া (ইউএসএজিএম)-এর কর্মীদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে এবং অনেক চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে, সংস্থাটির সম্প্রচার কার্যক্রমেও অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার ভিওএ পরিচালক মাইকেল আব্রামোভিটজ এক ফেসবুক পোস্টে জানান, তাকেসহ প্রায় ১,৩০০ জন কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে, ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যার মাধ্যমে ভিওএ-এর মূল সংস্থাকে দুর্বল করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। শোনা যাচ্ছে, ভিওএ-এর স্থানীয় ভাষার কিছু রেডিও স্টেশন খবর প্রচার বন্ধ করে সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, ভিওএ-এর শীর্ষস্থানীয় সম্পাদকদেরও কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। ফলে, ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে সংবাদ পরিবেশন প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। ভিওএ-এর একজন অভিজ্ঞ সংবাদদাতা একে ‘নীরবতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ভয়েস অফ আমেরিকা, রেডিও ফ্রি ইউরোপ, রেডিও ফ্রি এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য সম্প্রচার নেটওয়ার্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমগুলো ইউএসএজিএম-এর অধীনে পরিচালিত হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে এই নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গে থাকা চুক্তিগুলোও বাতিল করা হয়েছে।
ট্রাম্পের সমর্থকরা বলছেন, এই সম্প্রচার মাধ্যমগুলো অতিরিক্ত কর্মী ও পুরনো ধারণার উপর ভিত্তি করে গঠিত। তবে সমালোচকদের মতে, এসব নেটওয়ার্ক গুটিয়ে নিলে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীনসহ অন্যান্য দেশের কাছে তথ্য প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ হারাবে, যা আমেরিকার স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হবে।
বহু দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে আসছে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের নেতারা বিদেশি অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সঠিক সংবাদ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রসারে সহায়তা করেছেন। সংস্থাটির মূল লক্ষ্য হলো- বিশ্বের মানুষের কাছে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন ছিল। তাদের একটি অভ্যন্তরীণ স্মারকলিপিতে বলা হয়, সংস্থাটির প্রধান কাজ হবে ‘সারা বিশ্বে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা’। ট্রাম্প রক্ষণশীল মিডিয়া সমালোচক ব্রেন্ট বোজেল-কে এই সংস্থার প্রধান এবং সাবেক টিভি অ্যাঙ্কর কেরি লেককে ভিওএ-এর দায়িত্ব দেন। কেরি লেক বর্তমানে ‘সিনিয়র উপদেষ্টা’ হিসেবে কাজ করছেন।
কেরি লেকের মতে, প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের ফলে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এই আদেশের মূল উদ্দেশ্য হলো- সরকারি কার্যক্রম সীমিত করা এবং কর্মীদের সংখ্যা কমানো।
অন্যদিকে, এলন মাস্কের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মনে করেন, সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। তাদের মতে, এসব মাধ্যমে বামপন্থীদের একতরফা আলোচনা শোনা যায়, যা বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ নষ্ট করে।
তবে, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে অনেকেই মনে করেন, ভিওএ গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। ক্যালিফোর্নিয়ার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ইয়ং কিম বলেছেন, রেডিও ফ্রি এশিয়া এবং অন্যান্য ইউএসএজিএম প্ল্যাটফর্ম গুটিয়ে নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক স্বাধীনতা নীতির পরিপন্থী।
ইউএসএজিএম-এর বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। শনিবার কর্মীদের ছুটিতে পাঠানোর পাশাপাশি, ভিওএ-এর কিছু ঠিকাদারকে তাদের আইডি কার্ড জমা দিতে বলা হয়েছে। কর্মীদের আশঙ্কা, তাদের অফিসে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে, কেরি লেক এক স্মারকলিপিতে ইঙ্গিত দিয়েছেন, সম্প্রচার কার্যক্রম কোনো না কোনোভাবে অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেছেন, করদাতাদের অর্থের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এই সংস্থাকে আধুনিক করতে হবে।
মাইকেল আব্রামোভিটজ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ভিওএ-এর সংস্কার প্রয়োজন এবং তারা সে বিষয়ে কাজ করেছেন। তবে কর্মীদের সরিয়ে দিলে সংস্থাটি তার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না। বিশেষ করে, যখন ইরান, চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে কোটি কোটি ডলার খরচ করছে, তখন এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমেরিকান ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইউএসএজিএম এবং এর কর্মীদের অধিকার রক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন