এল সালভাদরের মেগা-কারাগার: অভিবাসীদের বিতাড়ন নিয়ে বিতর্ক। মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদরের একটি মেগা-কারাগার, যা দেশটির প্রেসিডেন্ট নাইয়িব বুকেলে’র অপরাধ দমনের নীতির অংশ হিসেবে পরিচিত।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে কয়েকশ অভিবাসীকে এই কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ভেনেজুয়েলার কুখ্যাত ‘ট्रेन দে আরagua’ গ্যাংয়ের সদস্য।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে কারাগারের কঠোর পরিবেশ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট বুকেলে অপরাধ দমনের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের মার্চ মাসে গ্যাং বিরোধী অভিযান শুরু করেন।
এর এক বছর পর, তেকোলুকা শহরে তৈরি হয় ‘সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’ বা সিইসিওটি (CECOT)। এই কারাগারটি প্রায় ৪০ হাজার বন্দী ধারণ করতে সক্ষম।
প্রতিটি কক্ষে রাখা হয় ৬৫ থেকে ৭০ জন বন্দী। সিইসিওটি-তে বন্দীদের সঙ্গে তাদের পরিবার বা বাইরের কারো সাক্ষাৎ করার অনুমতি নেই।
এমনকি এখানে পুনর্বাসন বা শিক্ষারও কোনো ব্যবস্থা নেই, যা মুক্তি পাওয়ার পর তাদের সমাজে ফিরতে সহায়তা করতে পারে। কারাগারের কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে আলাদা ডাইনিং হল, বিশ্রাম কক্ষ, জিম এবং বোর্ড গেমের ব্যবস্থা।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, কারাগারে পাঠানো অভিবাসীরা ভেনেজুয়েলার ‘ট्रेन দে আরagua’ গ্যাংয়ের সদস্য। যদিও তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্প প্রশাসন এই কাজের জন্য এল সালভাদর সরকারকে এক বছরের জন্য প্রায় ৬ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার চুক্তি করেছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এল সালভাদরের কারাগারে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ বন্দী রয়েছে, যা ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি।
মানবাধিকার সংগঠন ক্রিস্টোসাল জানিয়েছে, বুকেলের গ্যাং বিরোধী অভিযানের সময় অন্তত ২৬১ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। সংস্থাটি বন্দীদের ওপর নির্যাতন, চিকিৎসা সুবিধা না পাওয়া এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প, ১৭৯৮ সালের ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর আওতায় অভিবাসীদের বিতাড়নের ঘোষণা দেন।
এই আইন অনুযায়ী, কোনো বিদেশি নাগরিক যদি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরূপ হয়, তবে তাকে আটক বা বিতাড়িত করার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের রয়েছে। যদিও এই আইনের প্রয়োগ খুবই বিরল।
ট্রাম্পের দাবি ছিল, ‘ট্রেন দে আরagua’ গ্যাং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরূপ, তাই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিতাড়িত হওয়া অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে এবং তাদের মাথা নিচু করে বিমানবন্দরের টারমাকে নামানো হয়।
এরপর তাদের সাদা পোশাক পরিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস