জাপানে বেসবলের উত্থান ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাপানি খেলোয়াড়দের জয়জয়কার। খেলার জগত সবসময়ই মানুষকে আনন্দ দিয়েছে, যুগ যুগ ধরে তৈরি হয়েছে তারকা খেলোয়াড়।
ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিসের মতো জনপ্রিয় খেলাগুলোর পাশাপাশি বেসবলও বিশ্বজুড়ে বেশ পরিচিত। বিশেষ করে জাপান এবং আমেরিকাতে এই খেলার উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো।
সম্প্রতি, জাপানি খেলোয়াড়দের অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারণে বেসবল নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক জাপানে বেসবলের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের সাফল্যের গল্প।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জাপানে বেসবলের আগমন ঘটে। ১৮৯৬ সালে জাপানি এবং আমেরিকান খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
টোকিওর একটি স্কুলের ছাত্র দল, যারা বিদেশি ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত একটি দলের সাথে খেলেছিল। সেই খেলায় জাপানিরা জয়লাভ করে, যা জাপানে বেসবলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এরপর, খেলাটি দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পরে এবং এটি জাপানি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও বেসবলের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। এমনকি, যুদ্ধের সময় জাপানি সেনারা “বেব রুথের ধিক্কার” জানিয়ে আমেরিকান সৈন্যদের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ত।
এরপর জাপানে পেশাদার বেসবল লিগ গঠিত হয়, যা ধীরে ধীরে দেশের খেলাধুলা জগতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।
জাপানি বেসবলের ইতিহাসে কিছু কিংবদন্তি খেলোয়াড় রয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সাদাহারু ওহ। তিনি পেশাদার বেসবলে ৮৬৮টি হোম রান করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন।
এছাড়াও, শিগেও নাগাশিমার মতো খেলোয়াড়ও জাপানে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন।
নব্বইয়ের দশকে হিদেও নোমোর হাত ধরে জাপানি খেলোয়াড়দের মেজর লিগ বেসবলে (এমএলবি) খেলার সুযোগ তৈরি হয়। এরপর, ইচিরো সুজুকি, হিদেকি মাতসুইয়ের মতো খেলোয়াড়রা এমএলবিতে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন।
ইচিরো এখনো পর্যন্ত এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড ধরে রেখেছেন।
বর্তমানে, শোহেই ওতানির মতো খেলোয়াড়দের অসাধারণ পারফর্মেন্সে জাপানি বেসবল নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ওতানি একাধারে খেলোয়াড় এবং পিচার হিসেবে খেলেন এবং তার খেলা বিশ্বজুড়ে বেসবল প্রেমীদের মন জয় করেছে।
জাপানে বেসবলের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রমের সংস্কৃতি। জাপানি খেলোয়াড়রা তাদের খেলার প্রতি গভীর নিবেদিতপ্রাণ এবং তারা বছরের পর বছর ধরে কঠোর অনুশীলন করে থাকে।
এই কারণে, তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ভালো ফল করতে সক্ষম হচ্ছে।
তবে, জাপানি খেলোয়াড়দের বিদেশে খেলার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় দেশের বেসবল লিগের দর্শকপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে। কারণ, জাপানি ভক্তরা এখন তাদের দেশের খেলোয়াড়দের বিদেশি লিগে খেলতে দেখতে বেশি আগ্রহী।
জাপানে বেসবলের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং খেলোয়াড়দের সাফল্য সত্যিই অসাধারণ। এই খেলাটি জাপানের মানুষের কাছে শুধু একটি বিনোদনই নয়, বরং এটি তাদের জাতীয় গর্বের প্রতীক।
তথ্য সূত্র: সিএনএন