যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ভেনেজুয়েলার প্রায় ২৫০ জন নাগরিককে, যাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক গ্যাং সদস্য থাকার অভিযোগ রয়েছে, এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার জেরে হোয়াইট হাউস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
শনিবার, বিচারক জেমস ই বোয়াসবার্গ একটি শুনানিতে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিতর্কিত এই পদক্ষেপের ব্যাখ্যা চেয়েছেন। জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন পুরনো একটি আইন, ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ (Alien Enemies Act) ব্যবহার করে এই বহিষ্কারাদেশ জারি করে।
১৭৯৮ সালের এই আইনটি সাধারণত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই আইনের আশ্রয় নেন এবং এর পরপরই কিছু প্রগতিশীল গোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়।
আদালতে শুনানির সময় বিচারক বোয়াসবার্গ মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন যে, যে ফ্লাইটগুলো এরই মধ্যে ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের নিয়ে যাত্রা করেছে, তাদের অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে হবে। কিন্তু হোয়াইট হাউস কর্মকর্তাদের দাবি, বিচারক যখন নির্দেশ দেন, তখন অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ত্যাগ করে আন্তর্জাতিক জলসীমায় পৌঁছে গিয়েছিল।
তাই আদালতের এই নির্দেশ কার্যকর করার সুযোগ ছিল না। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে জানান, আদালত যে নির্দেশ দিয়েছিল, তার কোনো আইনগত ভিত্তি ছিল না।
যদিও এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, বিমানগুলো তার দেশে অবতরণ করেছে এবং অভিযুক্ত গ্যাং সদস্যদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এর পরেই বিতর্কের ঝড় ওঠে।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিমানগুলো যখন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমা ত্যাগ করে, তখন আদালতের নির্দেশ তাদের কাছে পৌঁছেছিল।
এই ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বিস্তারিত জানেন না, তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ‘খারাপ লোক’ ছিল।
এই ঘটনার সঙ্গে আরও একটি বিষয় জড়িত। জানা গেছে, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কিডনি বিশেষজ্ঞ এবং ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডা. রশা আলাউয়েহ-কে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যদিও তার আইনজীবীর দাবি, আদালতের নির্দেশ ছিল, তাকে বহিষ্কার করার আগে যেন আদালতকে ৪৮ ঘণ্টা জানানো হয়।
এদিকে, ডেমোক্রেটিক সিনেটর অ্যালেক্স প্যাডিলা, করি বুকার, ডিক ডারবিন এবং পিটার ওয়েলচ এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন, “আমরা কোনো যুদ্ধের মধ্যে নেই, এবং অভিবাসীরা আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ করছে না।”
তাদের মতে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা উচিত, যেখানে আদালতই নির্ধারণ করবে কে আইন ভেঙেছে, কোনো প্রেসিডেন্ট বা ইমিগ্রেশন এজেন্ট নয়।
এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, ভবিষ্যতে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান