**নিউক্যাসল ইউনাইটেডের কারাবাও কাপ জয়: সাফল্যের উল্লাসের মাঝে সৌদি আরবের ‘স্পোর্টসওয়াশিং’-এর ছায়া**
ফুটবল বিশ্বে আনন্দের ঢেউ উঠেছে। দীর্ঘ ৭০ বছর পর, নিউক্যাসল ইউনাইটেড তাদের প্রথম কোনো বড় শিরোপা জয় করেছে।
কারাবাও কাপ জয়ের আনন্দে উচ্ছ্বসিত নিউক্যাসলের সমর্থকেরা। মাঠের খেলোয়াড় থেকে শুরু করে গ্যালারির দর্শক—সবার মাঝেই ছিলো বাঁধনহারা উল্লাস।
তবে এই আনন্দের উল্লাসের মাঝে অন্য একটি আলোচনাও বেশ জোরেশোরে হচ্ছে। আর তা হলো, এই জয় কি শুধুমাত্র একটি ফুটবল ক্লাবের সাফল্য, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে সৌদি আরবের একটি বৃহত্তর কৌশল?
নিউক্যাসল ইউনাইটেড এখন সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (পিআইএফ) মালিকানাধীন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইয়াসির আল-রুমায়েয়ান এই ফান্ডটির প্রধান।
অভিযোগ আছে, সৌদি সরকার তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থেকে বিশ্ববাসীর মনোযোগ ঘোরাতেই খেলাধুলাকে ব্যবহার করছে। একে ‘স্পোর্টসওয়াশিং’ বলা হচ্ছে।
সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে অনেক সমালোচনা রয়েছে। দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের হার বৃদ্ধি, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন, এবং শ্রমিকদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ নিয়মিত শোনা যায়।
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিন্নমত প্রকাশ করার কারণে অনেককে কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি, জাতিসংঘের নারী অধিকার বিষয়ক কমিটিতে সৌদি আরবকে প্রধান করার সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, এটি ‘ড্রাকুলাকে ব্লাড ব্যাংকের দায়িত্ব দেওয়ার’ মতো।
এই পরিস্থিতিতে নিউক্যাসলের জয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলছেন, ফুটবল একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা একটি দেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে।
নিউক্যাসলের এই জয়, সৌদি আরবের জন্য তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার একটি সুযোগ তৈরি করেছে। ক্লাবটির সাফল্যের পেছনে থাকা আর্থিক শক্তি এবং সমর্থনের উচ্ছ্বাস, সৌদি সরকারের ‘স্পোর্টসওয়াশিং’-এর কৌশলকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
তবে, ফুটবল খেলার কিছু নিয়মকানুনও রয়েছে, যা ক্লাবগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই নিয়মগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘প্রফিটেবিলিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি রুলস’ (পিএসআর)।
এই নিয়মগুলো ক্লাবগুলোকে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং টেকসই দল গড়তে সহায়তা করে। নিউক্যাসলের বর্তমান সাফল্যের পেছনে এই নিয়মগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
এই জয় নিঃসন্দেহে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের সমর্থকদের জন্য আনন্দের। কিন্তু একই সাথে, আমাদের মনে রাখতে হবে, খেলাধুলা সবসময় রাজনীতির বাইরে নয়।
যারা খেলার খবর পরিবেশন করেন, তাদের দায়িত্ব হলো ঘটনার পেছনের সত্য তুলে ধরা। এক্ষেত্রে, শুধুমাত্র জয়োল্লাস প্রকাশ না করে, সৌদি আরবের মালিকানা এবং এর পেছনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে।
ফুটবলের এই আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মাঝে, আমাদের চোখ খোলা রাখতে হবে এবং সত্যকে তুলে ধরতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান