জাপান ভ্রমণে যাওয়ার আগে যা জানা দরকার।
জাপান, প্রকৃতির অপরূপ শোভা আর আধুনিকতার এক দারুণ মিশ্রণ। প্রতি বছরই এখানে আসে লক্ষ লক্ষ পর্যটক। যারা এই দেশটিতে ভ্রমণে যেতে চান, তাদের জন্য কিছু জরুরি তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।
কখন যাবেন?
জাপান ভ্রমণের সেরা সময় হলো বসন্তকাল (মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি) যখন চারদিকে চেরি ফুলের (সাকুরা) মেলা বসে। টোকিওর উয়েনো পার্কে বসে ফুল উপভোগ করা যেতে পারে, অথবা মেগুরো নদীর ধারে হেঁটেও এই দৃশ্য উপভোগ করা সম্ভব।
শরৎকালে (অক্টোবর-নভেম্বর) এখানকার প্রকৃতি লাল ও সোনালী রঙে সেজে ওঠে, যা ‘কোয়ো’ নামে পরিচিত। যারা শীত ভালোবাসেন, তারা ফেব্রুয়ারিতে হোক্কাইডোতে যেতে পারেন, যেখানে তুষার উৎসবের (স্নো ফেস্টিভ্যাল) আয়োজন করা হয়।
কোথায় ঘুরবেন?
জাপানে ঘোরার জন্য অসংখ্য সুন্দর জায়গা রয়েছে।
- টোকিও: আধুনিক এই শহরে রয়েছে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশ্রণ। ইয়ানাকা অঞ্চলের পুরনো শহর, মেইজি জিংগু মন্দির, ওমোতেসান্দোর ফ্যাশন জগৎ এবং টিমল্যাব গ্যালারি এখানকার প্রধান আকর্ষণ।
- কিয়োটো: পুরনো রাজধানী কিয়োটোতে রয়েছে সোনালী কিনকাকু-জি মন্দির এবং ফুশিমি ইনারি মন্দির-এর মতো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান।
- হাকোনে: এখানে গরম পানির ঝর্ণা, ঐতিহ্যবাহী ‘রিয়োকান’ ইন এবং ফুজি পর্বতের দৃশ্য মন মুগ্ধ করে তোলে।
- অন্যান্য স্থান: এছাড়াও, আপনি যেতে পারেন তোহোকুর মিখিনোকু উপকূলীয় ট্রেইলে, শিকোকুর আধুনিক শিল্পের দ্বীপগুলোতে অথবা কিউশুর আসো-কুজু জাতীয় উদ্যানে।
জাপানি খাবার:
জাপানের খাবারের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। এখানে কিছু জনপ্রিয় খাবারের নাম দেওয়া হলো:
- রামেন: জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে একটি হলো রামেন। হাকাটা রামেন (ফার্মেন্টেড শুকরের মাংসের স্টক এবং সরু নুডলস), সাপ্পোরো-স্টাইলের রামেন (মিসো সমৃদ্ধ ঝোল) -এর মতো বিভিন্ন প্রকার রামেন উপভোগ করতে পারেন।
- সুশি: সুশিও একটি জনপ্রিয় খাবার। বাজেট-বান্ধব ‘কাইতেনজুশি’ (কনভেয়ার বেল্ট সুশি) থেকে শুরু করে, দামি, তারকা চিহ্নিত রেস্তোরাঁগুলোতেও সুস্বাদু সুশি পাওয়া যায়।
ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য:
- ভাষা: জাপানের সরকারি ভাষা জাপানি। তবে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ইংরেজিও বেশ প্রচলিত।
- ভিসা: বাংলাদেশ থেকে জাপান যেতে ভিসার প্রয়োজন হয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য জাপানি দূতাবাস, ঢাকা-র সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
- পরিবহন: জাপানে ভ্রমণের জন্য ট্রেন সবচেয়ে সুবিধাজনক। বুলেট ট্রেন (শিনকানসেন) আপনাকে দ্রুত এক শহর থেকে অন্য শহরে নিয়ে যাবে। এছাড়াও, অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের ব্যবস্থা রয়েছে।
- শহরগুলোতে ভ্রমণের জন্য ট্যাক্সি বা বাসও ব্যবহার করতে পারেন।
- খরচ: জাপানে ভ্রমণের খরচ নির্ভর করে আপনার রুচি ও চাহিদার ওপর। বাজেট-বান্ধব হোটেল, স্থানীয় রেস্টুরেন্ট এবং গণপরিবহন ব্যবহার করে খরচ কমানো যেতে পারে।
টেকসই পর্যটন:
জাপানে ভ্রমণকালে পরিবেশের প্রতি যত্ন নেওয়া উচিত। এখানকার জাতীয় উদ্যানগুলোতে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার সময়, নির্দিষ্ট ট্রেইলে হাঁটা, ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা এবং স্থানীয় নিয়মকানুন মেনে চলা উচিত।
বিশেষ টিপস:
- হোটেল বুকিং: ভ্রমণের আগে হোটেল বুক করে রাখুন।
- পাসপোর্ট ও ভিসা: আপনার পাসপোর্ট এবং ভিসার মেয়াদ আছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
- টাকা: জাপানে সাধারণত জাপানি ইয়েন (JPY) ব্যবহার করা হয়।
- খাবার: মুসলিম পর্যটকদের জন্য হালাল খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ভেজিটেরিয়ান খাবারেরও সুযোগ আছে।
- ভিসা এবং ভ্রমণের নিয়মকানুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে, জাপানি দূতাবাসের ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে পারেন।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক