পশ্চিম আফ্রিকায় ফ্রান্সের প্রভাব কমার সুযোগে রাশিয়ার ‘ভূয়া সাংবাদিক’দের অপপ্রচার। সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পশ্চিম আফ্রিকায় রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে চালানো হচ্ছে এক সুপরিকল্পিত অপপ্রচারণা।
এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ভূয়া সাংবাদিক’-এর ছদ্মবেশ, যারা মূলত রাশিয়ার হয়ে কাজ করে এবং ফরাসি বিরোধী প্রচারণা চালায়। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রচারণার মূল লক্ষ্য হলো ফরাসি প্রভাব হ্রাস করা এবং রাশিয়ার প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করা। এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ভুয়া পরিচয় এবং সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত নিবন্ধ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘গ্রেগোয়ার সিরিল ডংগোনাম্বা’ নামের একজন ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে একটি ভুয়া পরিচয়। ডংগোনাম্বা নিজেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং ফরাসি ভাষাভাষী আফ্রিকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত লিখতেন।
তার নিবন্ধগুলোতে ফরাসি প্রভাবকে ক্ষতিকর এবং রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতিকে উপকারী হিসেবে তুলে ধরা হতো। আসল ঘটনা হলো, ডংগোনাম্বা নামের কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিনি মূলত সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের (সিএআর) প্রয়াত শিক্ষক ও ফুটবল রেফারি জ্যাঁ-ক্লদ সেন্ডেওলির ছবি ব্যবহার করতেন। সেন্ডেওলির মৃত্যুর পর তার ছবি ব্যবহার করে ভুয়া পরিচয় তৈরি করা হয় এবং তার নামে নিবন্ধ প্রকাশ করা হতে থাকে।
এই অপপ্রচারণার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে আসা ব্যক্তি হলেন ঘানার নাগরিক সেথ বোয়াম্পং ওয়াইরেদু। তিনি ২০০৮ সালে রাশিয়ায় পাড়ি জমান এবং সেখানে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের সঙ্গে জড়িত ‘ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি’ (আইআরএ)-এর হয়েও তিনি কাজ করেছেন।
আল জাজিরার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই প্রচারণার পেছনে সম্ভবত রাশিয়ার হাত রয়েছে। প্রকাশিত নিবন্ধগুলোর ডিজিটাল ফাইল বিশ্লেষণ করে রুশ ভাষার উপস্থিতি এবং একটি রাশিয়ান ফোন নম্বরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে ফ্রান্সের প্রভাব কমে আসায় রাশিয়া সেখানে তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এই অঞ্চলের অনেক দেশে বর্তমানে ফরাসি বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে সামরিক অভ্যুত্থান এবং সরকার পরিবর্তনের ফলে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের পথ আরও সুগম হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়ার এই অপপ্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হলো আফ্রিকার দেশগুলোতে ফরাসি প্রভাবের অবসান ঘটানো এবং তাদের স্বার্থ হাসিল করা।
এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ভুয়া খবর ও প্রচারণার মাধ্যমে জনমত তৈরি করা। এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয় যে, বর্তমান বিশ্বে তথ্যযুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
যেকোনো দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের এই ধরনের অপপ্রচারণা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং নির্ভরযোগ্য তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। তথ্য সূত্র: আল জাজিরা