মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি (আরএফই/আরএল)-এর তহবিল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নির্বাসিত রুশ সাংবাদিকরা। এই সিদ্ধান্তের ফলে তাঁদের ভিসা জটিলতা তৈরি হতে পারে এবং তাঁরা তাঁদের আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
খবরটি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’। শীতল যুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত আরএফই/আরএল-এর প্রধান কাজ ছিল বেলারুশ, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মতো দেশগুলোতে সংবাদ পরিবেশন করা।
জানা গেছে, এই রেডিও স্টেশনে কর্মরত অনেক রুশ সাংবাদিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, কারণ তাঁদের ভিসার সঙ্গে কাজের সম্পর্ক রয়েছে। আরএফই/আরএল-এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা তাঁদের বসবাসের বৈধতা হারাবেন।
এর ফলে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরেছেন সংশ্লিষ্ট একজন ব্যক্তি।
তিনি জানান, “কর্মসংস্থান হারানোর কারণে রুশ সাংবাদিকরা কঠিন পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন। তাঁদের রুটি-রুজি কেড়ে নেওয়া হতে পারে এবং তাঁরা তাঁদের আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।” বর্তমানে আরএফই/আরএল-এর অনেক সাংবাদিক প্রাগ, রিগা এবং ভিলনিয়াসে কাজ করেন।
তাঁদের ভিসা মূলত তাঁদের চাকরির ওপর নির্ভরশীল। একবার যদি এই রেডিও স্টেশনের তহবিল বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তাঁদের ভিসা বাতিল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এমন হলে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে পাঠানো হতে পারে, যেখানে তাঁদের কারাদণ্ড হতে পারে।
২০২৩ সালে আরএফই/আরএল-এর দীর্ঘদিনের সাংবাদিক আলসু কুরমাশেভাকে রাশিয়ায় আটক করা হয়েছিল। পরে বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
২০২২ সালে রাশিয়ার কর কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের চাপের কারণে আরএফই/আরএল-কে কার্যক্রম স্থগিত করতে হয়েছিল। এরপর তাঁদের সাংবাদিকদের ‘বিদেশি এজেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এমনকি তাঁদের রাশিয়া ফিরলে গ্রেফতার করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। গত বছর রুশ কর্তৃপক্ষ আরএফই/আরএল-কে ‘অনভিপ্রেত সংস্থা’ হিসেবে ঘোষণা করে, যার ফলে তারা রাশিয়ার অভ্যন্তরে কাজ করতে নিষিদ্ধ হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়া (ইউএসএজিএম) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তারা আরএফই/আরএল-কে অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দেবে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সরকারি ব্যয় কমানোর অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ট্রাম্পের সহযোগী বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্ক এই গণমাধ্যমকে ‘বামপন্থী’ আখ্যা দিয়ে এর সমালোচনা করেছেন। আরএফই/আরএল-এর মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে প্রায় এক কোটি রুশ নাগরিক সংবাদ পান।
সরকারি সেন্সরশিপ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার পরেও এই গণমাধ্যমটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে আরএফই-এর রুশ ভাষার ইউটিউব চ্যানেলের দর্শক সংখ্যা বেড়েছে।
যেখানে আগে প্রতি মাসে ২ কোটি ভিউ হতো, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৭৬ লাখ। এমনকি যুদ্ধের শুরুতে এই চ্যানেলে ৪০ কোটির বেশি দর্শক ছিল। গত বছর আরএফই/আরএল-এর বাজেট ছিল ১৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা)।
এই মুহূর্তে আমেরিকার প্রতিপক্ষের অপপ্রচার ও সেন্সরশিপের কাছে নতি স্বীকার করার সময় নয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বর্তমানে আরএফই/আরএল-এর জন্য বিকল্প তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তবে অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে তাঁরা এই গণমাধ্যমটির পুরো কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে পারবেন কিনা।
চেক প্রজাতন্ত্র ইইউ-এর পক্ষ থেকে একটি সহায়তা প্যাকেজ তৈরির চেষ্টা করছে। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান