যদি কোনো জনপদ এক বছর ধরে অবরোধের শিকার হয়, তবে তার ভয়াবহতা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। অবরোধ মানেই হলো বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, খাদ্য, পানি, চিকিৎসা এবং অন্যান্য জরুরি সামগ্রীর চরম অভাব দেখা দেওয়া।
একটি বছর—৩৬৫ দিন—এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে কাটানো কতটা কষ্টের, তা ভুক্তভোগীরা ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারবে না।
ধরুন, একটি শহরের কথা। শহরটির নাম দেওয়া হলো ‘শান্তিগঞ্জ’।
গত এক বছর ধরে এই শান্তিগঞ্জ বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
অবরোধের শুরুতেই খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বাজারে জিনিসপত্রের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়, যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।
ধীরে ধীরে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়, ফলে ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে।
চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল শুরুতেই। প্রয়োজনীয় ঔষধ ও সরঞ্জামের অভাবে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছিল না।
হাসপাতালের শয্যাগুলোতে উপচে পড়া ভিড়, কিন্তু ডাক্তার ও নার্সদের অসহায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। শিশুদের অপুষ্টি এবং বৃদ্ধ ও দুর্বল মানুষের মৃত্যু ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
এই অবরোধের পেছনে কারণ কী ছিল, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, এটি একটি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফল।
উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
শান্তিগঞ্জের মানুষ নীরবে এই বিভীষিকা সহ্য করছে। তারা কেবল একটি স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাশা করে, যেখানে খাদ্য, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা শান্তিগঞ্জের মানুষের জন্য ত্রাণ পাঠানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু অবরোধের কারণে তা পর্যাপ্ত নয়।
কিছু ত্রাণ পৌঁছলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা হলেও কোনো ফল হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা।
তাদের মানবিক বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। শান্তিগঞ্জের মানুষের এই দুর্দশা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিক, দ্রুত তাদের মুক্তি আসুক—এই কামনা করি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা