স্পেনের পার্লামেন্টে খাদ্য বর্জ্য হ্রাস করার উদ্দেশ্যে একটি আইনের সংশোধনী আনা হয়েছে, যা নেকড়ের শিকারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সম্ভবনা তৈরি করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে একদিকে নেকড়ের শিকারকে সমর্থন করা হচ্ছে, অন্যদিকে এর বিরোধিতা করা হচ্ছে।
২০২১ সালে নেকড়ে শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নেকড়ে প্রতি বছর আনুমানিক ১.২ বিলিয়ন কিলোগ্রাম খাদ্য বর্জ্যের মধ্যে প্রায় ১৪ মিলিয়ন কিলোগ্রাম মাংস বর্জ্য তৈরি করে, কারণ তারা ১৪,০০০ ভেড়া ও গবাদি পশু শিকার করে।
ক্যাসটিলা ও লিওন অঞ্চলে, যেখানে নেকড়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সেখানকার কৃষক সংগঠনগুলোর দাবি, ২০২৪ সালে নেকড়ে প্রায় ৬,০০০ গবাদি পশু মেরে ফেলেছে।
তবে সমালোচকদের মতে, এই দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিল (ডব্লিউডব্লিউএফ) স্পেনের সাধারণ সম্পাদক জুয়ান কার্লোস দেল ওলমোর মতে, “আজ পার্লামেন্ট প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য একটি কালো দিন ডেকে এনেছে।
কোনো প্রকার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়াই তারা নেকড়েদের সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি বাতিল করতে চাইছে।” ডব্লিউডব্লিউএফ মনে করে, এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এটি নেকড়ে নিধনকে উৎসাহিত করবে। একই সঙ্গে, বন্যপ্রাণী ও কৃষকদের মধ্যে সহাবস্থানের যে অগ্রগতি হয়েছে, তা দুর্বল করে দেবে।
স্পেনের পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রের মতে, “বন্যপ্রাণী ও মানুষের মধ্যেকার এই সংঘাত নতুন কিছু নয়।
সবার জন্য উপকারী একটি নীতি হলো সহাবস্থান।”
যদিও নেকড়ে শিকারের পক্ষের লোকজন বলছেন, নেকড়ের সংখ্যা বাড়ছে, তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর নেকড়ের সংখ্যা তেমন বাড়েনি।
উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে, যেখানে স্পেনের প্রায় ২,৫০০ নেকড়ের বাস, সেখানে এদের সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে।
ক্যাটাালান জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য, যিনি এই সংশোধনীকে সমর্থন করেছেন, তিনি শিকারের বিরোধীতা করলেও বলেন, “এখন পর্যন্ত, কৃষকদের কোনো সুরক্ষা নেই।”
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নেকড়ের সুরক্ষার মাত্রা ‘কঠোরভাবে সুরক্ষিত’ থেকে কমিয়ে ‘সুরক্ষিত’ করে। ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন der লেয়েনের পরিবারের পোষা ঘোড়াকে নেকড়ে মেরে ফেলার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান