যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফুটবল লীগ (এনএফএল) এবং মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী কোচ ম্যাট ওয়াইস-এর বিরুদ্ধে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নেওয়ার জন্য কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ডেট্রয়েটের একটি ফেডারেল আদালতে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, ওয়াইস ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে কয়েক হাজার কলেজ শিক্ষার্থীর কম্পিউটার অ্যাকাউন্টে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন। তিনি ১৪টি কম্পিউটার ব্যবহারের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ এবং ১০টি পরিচয় চুরির অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাল্টিমোর রেভেনস দলের হয়ে কাজ করার পর, ২০২১ সালে ওয়াইস মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোচিং স্টাফে যোগ দেন। ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সিস্টেমে তার প্রবেশাধিকার নিয়ে তদন্ত শুরু হলে তিনি সহযোগিতা করতে অস্বীকার করেন। এর পরেই তাকে বরখাস্ত করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওয়াইস একটি থার্ড-পার্টি ভেন্ডর ‘কেফার ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস’-এর মাধ্যমে পরিচালিত ১০০টির বেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেটাবেসে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি ১ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত ডেটা ডাউনলোড করেন।
অভিযোগপত্রে ওয়াইসকে একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, তিনি “ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পাসওয়ার্ড রক্ষার জন্য ব্যবহৃত এনক্রিপশন ভেঙে ফেলেন”। এরপর তিনি ২ হাজারের বেশি খেলোয়াড় এবং ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী বা প্রাক্তন শিক্ষার্থীর সোশ্যাল মিডিয়া, ই-মেইল এবং ক্লাউড স্টোরেজ অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, “ওয়াইস মূলত নারী কলেজ খেলোয়াড়দের লক্ষ্যবস্তু করতেন।” তিনি তাদের স্কুল, খেলাধুলার ইতিহাস এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চিহ্নিত করতেন। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করা, যা সাধারণত অন্তরঙ্গ সঙ্গীর সাথে শেয়ার করার জন্যই তোলা হতো।
ওয়াইস ডাউনলোড করা ছবি ও ভিডিওগুলির একটি তালিকা রাখতেন। সেখানে তিনি তাদের শারীরিক গঠন এবং যৌন পছন্দ সম্পর্কে মন্তব্য করতেন। এমনকি, কয়েক বছর পর তিনি নতুন ছবি আছে কিনা, তা দেখতে ফিরে আসতেন।
ডেট্রয়েটের ভারপ্রাপ্ত মার্কিন অ্যাটর্নি জুলি বেক এই অভিযোগের বিষয়ে বলেন, “আমরা নাগরিকদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট রক্ষার জন্য কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।
ওয়াইস দীর্ঘদিন ধরে এনএফএল-এর সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি জন হারবাউয়ের অধীনে বাল্টিমোর রেভেনস-এ কাজ করতেন। পরে তিনি হারবাউয়ের ভাই জিম হারবাউয়ের অধীনে মিশিগানে যোগ দেন।
ওয়াইস যে তদন্তের আওতায় ছিলেন, তা গত দুই বছর ধরে সবার জানা ছিল। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তার মিশিগানের বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালায়। সে সময় তিনি বলেছিলেন, তিনি তদন্তে সহযোগিতা করছেন এবং “বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে” আশা করছেন।
ওয়াইসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের শুনানির তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস